
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই নানা ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী কথার লড়াই চললেও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বড় দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান ছিল অভিন্ন। তবে, নির্বাচন এগিয়ে আসতেই সেই ঐক্যে বাড়ছে ফাটল। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দল দুইটি এখন মুখোমুখি অবস্থানে।
বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ১৪ মাসে এসে প্রথমবারের মতো কোনও ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচিতে নেমেছে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তা কি নির্বাচন সামনে রেখে জোটবদ্ধ শক্তির জানান দেয়া, নাকি বড় রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিকে চাপে রেখে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের কৌশল, সেই প্রশ্ন এখন দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে প্রশ্ন, ধর্মভিত্তিক সাত দলের কর্মসূচি ঘিরে কোন পথে দেশের রাজনীতি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন কর্মসূচিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে পারে দেশ।
রাজনীতি বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির চেয়ে আমরা জাতীয়ভাবে বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। যদি আমরা এগুলো বুঝতে না পারি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান আমাদেরকে নিয়ে খেলবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। আমরা ব্যবহৃতই হবো শুধু।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তৃতীয় একাধিক পক্ষ। তারা সফল হলে বিপদে পড়বে জুলাই আন্দোলনের সব শক্তি।
ড. সাব্বির আহমেদ বললেন, সামনের নির্বাচনটা বাতিল হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এই অপশনটাও একটা পক্ষ ওপেন রাখছে বলে আমর মনে হয়। এই খেলাটা কি আসল মনে হয়, এই যে মাঠে গিয়ে বিক্ষোভ করা, কার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-কর্মসূচি করতেছে? সরকারের বিরুদ্ধে? কিন্তু সেই সরকারের অংশ হয়ে আবার সে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যাচ্ছে কীভাবে?
রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জটা হলো তাদের কারণে যে বিভক্তি সমাজে প্রকাশিত হচ্ছে, এর ফলে একাধিক তৃতীয় পক্ষ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে চাইতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইতে পারে। এর ফলে কিন্তু জুলাইকেন্দ্রিক যে সকল দল আছে, তাদের সবারই কিন্তু ঝুঁকি আছে।
এদিকে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোটের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। জামায়াতের নেতৃত্বে দলগুলোর আন্দোলন মূলত ভোটের প্রস্তুতি, তা মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেছেন, বোঝাপড়ায় সরকারকে একটা চাপ দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যারা পিআর চায় না তাদেরকে মানসিকভাবে চাপে রাখলো। নাগরিকদেরকে একটু বুঝালো, তারা কি চায়? এটার কারণে আলাপ হচ্ছে তো, নাগরিকরা যুক্ত হলো। তাহলে তাদের লাইনেই তো যুক্ত হলো। তো ভোটটা দেয়ার সময় তাদেরকে দেবে। বিক্ষোভে নাগরিক যেই লাইনে আসবে সময় সেই লাইনে ভোট দেবে।
দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছুটা ছাড় দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশ্লেষকরা।