
নিজের প্রতি ওঠা ফাইল তদবির ও লবিংয়ের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) নিজের ফেসবুকে ব্যাংক একাউন্টস-এর স্ক্রিনশট যুক্ত করে একটি পোস্ট দেন তথ্য উপদেষ্টা।
পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেন, ‘তদবিরের কথা উঠলো যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সাথে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দিবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজ ও স্থগিত হয়।
সে ব্যক্তি কনভার্সেশন রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই আমরা একাজ করতে দেইনি। আর, ঐ লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে একাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।
আজকাল অনেকের লেজকাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে।
পুনশ্চঃ আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেনি। বিভিন্ন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজারকোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিঃদ্রঃ কয়েকটা বাক্য নিয়ে অযথাই জলঘোলা হচ্ছে, তাই এডিট করে দিলাম। জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিকাল মবিলিটির ল্যডার।একটা না কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/ আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদী বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’
এদিকে তথ্য উপদেষ্টার ভাইও মিথ্যা অভিযোগের জবাব শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘মিথ্যা অভিযোগের জবাব!!
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার একাউন্টে গত ৬ মাসের বিবরণি এখানে দেয়া হল। আমার একাউন্টটি এখনো সচল আছে। বনি আমিন নামক ব্যক্তি ও কিছু মিডিয়ার প্রচারিত তথ্য আসলে মিথ্যা বৈ কিছু নয়। আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার একাউন্টটি ২৩ সাল থেকে খোলা।
আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে কোন তদবিরের কাজ আমি করিনি। কাউকে সে আজ পর্যন্ত করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসায় বাদে আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোন আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। আমাদের পরিবার গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় জড়িত। আমার বাবা গত ১৬ বছর লীগের নিপীড়নের কারণে ঠিকমত ব্যবসায় করতেই পারেননি।
আমার বাবার ও মাহফুজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো আমি ও আমার বাবা পরিচালনা করছি। এখানে কোন অস্পষ্টতা নাই। সবই বাংলাদেশের আইন দ্বারা সিদ্ধ এবং পাবলিক ইনফরমেশন।
গত নভেম্বরে দেশে ফিরে আসার পর থেকে অনেক তদবির আসলেও মাহফুজ কোন কাজই করেনি। বরং, আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের স্পষ্ট নিষেধ করা আছে, যাতে কোন তদবির তাকে না করা হয়। তার বা আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা তদবির বাণিজ্যের কোন প্রমান আজও কেউ দিতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, আমরা করিনি।
বি:দ্র: আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।আমি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবীদের সাথে কথা বলছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিবো।’
এরও আগে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাহফুজ আলমের ফাইল তদবির ও লবিংয়ের কমিশনের অর্থ অস্ট্রেলিয়াতে তার ভাই মাহবুব আলম মাহির রিসিভ করে —এমন অভিযোগের কথা উল্লেখ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট বনি আমিন।
পোস্টে তিনি লিখেন ‘সিডনীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেন! নবপ্রজন্মের আন্দোলনের মহানায়ক হিসেবে পরিচিত মাহফুজ, যার প্রতি অনেকেই ভরসা রেখেছিলেন, তার নাম এখন একটি বিতর্কের কেন্দ্রে। জন্মদেশের বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান, মাহফুজের নামের পাশে আজ যোগ হচ্ছে বিতর্ক, ঠিক যেমনভাবে কিছুদিন আগে আলোচনায় এসেছিল হাতিয়ার হান্নান মাসুদ ও 'ধরা খাওয়া' সমন্বয়ক রিয়াদ। নোয়াখালীর গৌরবময় ইতিহাস ও মর্যাদার প্রতি এই অব্যবহার আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে।
জানা গেছে, মাহফুজের আপন বড় ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করে। উচ্চতর লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে সে পার্টটাইম একজন নিবেদিত যাত্রী সেবক, বাংলায় বলা হয় 'ট্যাক্সি ড্রাইভার'। মাহফুজের বিভিন্ন লবিং ও ফাইলিংয়ের কমিশনের অর্থ অস্ট্রেলিয়াতে তার স্টুডেন্ট ভাইয়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা হচ্ছিল দীর্ঘ ৯ মাস ধরেই (Commonwealth Bank of Australia), গত ২৪/০৭/২০২৫ মিডল ইস্ট থেকে একটি সাড়ে ছয় কোটি টাকার লেনদেন অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার (AUSTRAC) নজরে আসে। অস্বাভাবিক আর্থিক এই কার্যকলাপের দায়ে তার ভাইয়ের ব্যাংক একাউন্টটি জব্দ করা হয়। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন, তাই বিস্তারিত আপাতত চেপে যেতে হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থ জন্মদেশের একটি প্রভাবশালী বেনিয়া গোষ্ঠীর প্রজেক্ট থেকে পাওয়া 'কমিশনভিত্তিক হিস্যা'। জন্মদেশে মাহফুজ ফাইল তদবির ও লবিং করে আর কমিশনের অর্থ অস্ট্রেলিয়াতে ভাই রিসিভ করে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক গোয়েন্দা বিভাগ (AUSTRAC) বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে। অনেকেই এখন এই অস্বাভাবিক 'ধরা খাওয়া লেনদেন'কে তুলনা করছে বিগত B.A.L আমলের সেই 'ছাগল কাণ্ড' এর সাথে। এই বাস্তবতায় আমার মনে প্রশ্ন জাগে—আমরা কি শুধুই একজন বা দুজন সমন্বয়ককে লক্ষ্য করব, নাকি পুরো সিস্টেমে যারা প্রবেশ করেছে তাদেরকেও কঠিনভাবে পর্যবেক্ষণ করব?
আমার সুপারিশ, জন্মদেশে অবস্থানরত প্রতিটি সমন্বয়ক এবং তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের [ফার্স্ট ডিগ্রী রিলেটিভ] আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক একাউন্ট এবং সম্পদ বিবরণী একটি জাতীয় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হোক। এর আওতায় তাদের পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা—সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিশেষ করে, হাতিয়ার সেই আলোচিত সমন্বয়ক হান্নান মাসুদ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবার, এমনকি তার শ্বশুরবাড়ির পক্ষের সম্পত্তিও আজই রাষ্ট্রীয় তদন্তের আওতায় আনা উচিত। না হলে, দেশের উন্নয়নপ্রয়াস এক শ্রেণির দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে—যেখানে দেশের কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ শুধু দর্শক হয়ে থাকবে, এবং ত্যাগের বদলে পাবে হতাশা ও অবহেলা।
সময় এসেছে সততা ও আদর্শিক নেতৃত্বকে রক্ষা করার, আর দুর্নীতির বিষবৃক্ষকে মূল থেকে উপড়ে ফেলার।