
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) রাজনৈতিক দল থেকে দূরে থাকার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা কোনো বিশেষ দলের হয়ে কাজ করবেন না, নিজেকে রাজনৈতিক দলের কর্মী ভাববেন না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ধৈর্যের সঙ্গে মাথা ঠাণ্ডা রেখে আইনি প্রক্রিয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কাজকর্মে যত স্বচ্ছ থাকবো তত সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবো।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ রবিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম নির্বাচনি দায়িত্ব পেশাদারত্বের সাথে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাহারুল আলম বিপিএম এর সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ নাসিমুল গণি। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আয়োজিত আইজি (এইচআরএম) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। বিগত ১৮ ও ২৪ সালসহ অতীতের বাজে নির্বাচনগুলোর কথা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশ এমন নজির স্থাপন করুক যা শুধু দেশে নয় বিদেশেও প্রশংসিত হয়।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেভাবে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে তেমনি দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানেও নিজেদের পেশাদারত্বের প্রমাণ দিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ পুলিশ সদস্যদের আরো সক্ষম করবে, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং পেশাদারী মনোভাব গড়ে তুলবে।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশের বদলি ও পোস্টিং দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী বলেন, জুলাই-আগস্টের পর পুলিশে কতটা পরিবর্তন এসেছে তার প্রমাণ হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন।
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ মডিউলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন উৎসবমুখর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ নাসিমুল গণি বলেন, দেশকে একটা উৎসবমুখর নিরাপদ নির্বাচন উপহার দেওয়া, জনগণকে নিরাপদ রাখা এবং পুলিশের হারিয়ে যাওয়া সম্মান পুনরুদ্ধার করা পুলিশের দায়িত্ব।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা দেশে যেন একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারি এবং জনগণ যেন খুশি হয় সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাহারুল আলম বিপিএম বলেন, পুলিশের প্রায় দেড় লাখ সদস্য নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিরীক্ষিত হবে। প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির মাধ্যমে প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নানা ধরনের চাপ, চ্যালেঞ্জ ও প্রলোভনের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু আমাদের শপথ হচ্ছে আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং জনগণের আস্থা অটুট রাখা। কোন পরিস্থিতিতেই পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত হতে হবে আইনের বিধান ও ন্যায় বিচারের আলোকে।
তিনি সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি কৌশল ও প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন এবারই প্রথম।