ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে: আলী রীয়াজ

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে: আলী রীয়াজ
প্রকাশিত

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনগুলোর ব্যাপারে যদি একমত না হওয়া যায়, তাহলে আমার শঙ্কা হচ্ছে, নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যে জায়গায় দাঁড়াব, তাতে মৌলিক কোনো হেরফের ঘটবে না।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভিন্নমত আছে। এই নির্বাচনটা কিরকম নির্বাচন তা নির্ধারণ করা না গেলে অনেকগুলো বিষয় একমত হবেনা। আমরা কাজ করার সময় যেটা দেখেছি, গত ১৬ বছরের যে সংকট তা শুধু ১৬ বছরের সংকট নয়। কাঠামোগত পরিবর্তনে একমত না হলে মৌলিক কোন হেরফের ঘটবে না। পুরো সংবিধানের মধ্যে থাকলে আমরা একটেবিলে বসতাম না, কিছু একটা ঘটে গেছে।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার সবাই চায়। পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের কথা যারা বলছেন বর্তমান রাজনৈতিক কালচারে তা কি বাস্তবায়ক কিনা তা চিন্তা করতে হবে। বিচারের জন্য টাইম লাইন নির্ধারণ করলে তা অবিচার হবে। এটি সময়ের বিষয়। নিজস্ব রাজনৈতিক দলের স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ ভুলে গেলে তা আত্মঘাতি হবে। আমরা বাইরে যা বলছি ভেতরেও তা বলছি৷ আমাদের মানসিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জনগণের প্রতিশোধ কিন্তু নির্মম। কারণ ২৪ সালে জনগণ যে প্রতিশোধ নিয়েছেন তা খুব নির্মম। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর তার সব অকার্যকর হয়ে গেছে। জনগণ স্বৈরাচার মুক্ত দেশ গঠন করেছে। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব না।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ চেয়েছেন। যা আগের মতো করে চলবে না। আমরা ঐক্যমত্য কমিশনে বসেছি কারণ, সাংবিধানিকভাবে নতুন রাষ্ট্র কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য। জনগণের কথা মাথায় রেখে যেন রাজনৈতিক সমঝোতা করতে পারি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে। যে রাষ্ট্র ন্যায় বিচার দিতে পারেনা, তা টিকে থাকতে পারে না। যা শেখ হাসিনার সময় পরিলক্ষিত হয়েছে। গণতন্ত্রের মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি নির্বাচনে জিতে যাবে কিন্তু কিছুই করবেনা, এ রকম একটি ধারনা তৈরি করেছে। এ নিয়ে বিএনপির ভাবা দরকার। নির্বাচনের পরিবেশ হয়ে উঠবে সবচেয়ে সংকটময় জায়গা।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় করণ করেছিলো শেখ হাসিনা। বিদ্যমান পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠান এ বিষয়গুলো মেরামত করলে অতীতের রূপ ফিরে আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের অনেক গুলো বিষয়ে একমত হয়েছে। এখন কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।

রাজনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত্য কমিশনের পুরো আয়োজনে একধরনের সীমাবদ্ধতা ছিলো। কাঠামোগত সংস্কার ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো যা আলোচনায় উঠে আসেনি। ক্ষমতার প্রায়গিক বাস্তবতা নিয়ে কথা উঠে আসেনি। দারিদ্রের মাত্রাটা গত ৪-৫ বছরে অনেক বেড়ে গেছে, বেড়েছে বেকারত্বের সংখ্যা। এগুলো বাড়ছে তার মূল প্রায়োগিক অনিশ্চয়তা। সাধারণ মানুষের মাঝে অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। যার সমাধানের রাস্তাটা খোজা দরকার। এক ধরনের অনাস্থা আছে রাজনীতিবিদদের ওপর। তাদের মাধ্যমেই কিন্তু সমাধান গুলো খুঁজছি আমরা।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার নিজেদের হাস্যকর করে ফেলেছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের উচিত নেপাল থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার।

হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, স্বাধীনতার পরে এই রকম সরকার আর আসেনি। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই সরকার। তাই তাদের কাছে প্রত্যাশাও বেশি। একটি নির্বাচিত সরকার যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে তা অনির্বাচিত সরকার পারে না। তার প্রমাণ আমরা আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেখছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন দরকার।

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আমরা আগের জায়গায় চলে যাবো।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দ্রব্য মূল্যে বৃদ্ধির চাপ অব্যাহত আছে। দেখা দিচ্ছে শ্রমিক অসোন্তষের আশঙ্কা। বিনিয়োগের অনিশ্চয়তাও বাড়ছে। সংবিধানকে নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করলে অনেক গুলো সাংবিধানিক বিষয় সামনে চলে আসবে। তখন কিন্তু কেঁচো খুড়তে সাপও বের হয়ে আসতে পারে। দেশের ভেতরে একটি রাজনৈতিক শূণ্যতা বিদ্যমান। যে কারণে অর্থনৈতিক, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দায়িত্বশীল যারা ক্ষমতায় আছে তাদের আরও শক্তিশালী না করলে একটি সুস্থ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে রাজনৈতিক শূণ্যতা কাটবে না।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, অতীতের আলোচনা একদম অর্থহীন ছিলো। তবে ঐক্যমত্য কমিশন এবার সব রাজনৈতিক দলকে এক করতে পেরেছে। যেসব সংস্কারের বিষয়ে সবাই একমত, তাই বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক করে একটি পথ বের করবেন বলেও আশাকরি। আশাকরি আগামী নির্বাচনেও সবাই অংশ নিবেন।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com