
চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমদানি-রপ্তানিতে গড়ে ৩০ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আন্তঃমন্ত্রণালয় ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি ট্যারিফ বাড়ানোর কথা জানান। এ সময় তিনি বন্দর নিয়ে কোন গুজব না ছড়াতেও সবাইকে অনুরোধ করেন।
ট্যারিফ প্রসঙ্গে নৌ উপদেষ্টা আরও বলেন, ১৯৮৬ সালের পর এবারই প্রথম ট্যারিফ বাড়ানো হয়। এতে রাজস্ব আয় বাড়বে, তবে এটা ঠিক যে আমদানি-রপ্তানিতে খরচ বাড়বে ব্যবসায়ীদের।
বন্দরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে হলে বিদেশি অপারেটরকে পরিচালনার ভার দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে চায়। তবে বিদেশিদের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলেও বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম ও নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকবে। গত ৭ জুলাই সাইফ পাওয়ার টেক থেকে নিয়ে বন্দরের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দেওয়া হয়। এরপর নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ২০০ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে এখন। এই কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের কেমিক্যাল শেড উদ্বোধন করেন নৌ উপদেষ্টা। এসময় তিনি বলেন, এনসিটি নিয়ে আপনারা বহু আলোচনা শুনেছেন। আমিও এখানে টেকওভার করার পর থেকে আলোচনাগুলো শুনছি। ১৭-১৮ বছর যারা এনসিটিতে ছিলেন আমি বলবো যে ভালো কাজই করেছেন। খারাপ করেননি। তারা তাদের মতো কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের থেকে আরও বেশি ইফিশিয়েন্ট করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে বেশিরভাগ পোর্টই প্রাইভেটলি পরিচালনা হচ্ছে। আমাদের যদি ইফিশিয়েন্সি বাড়াতে হয় তাহলে বাইরের টেকনোলজিস আনতে হবে। নিজেরা নিজেরা করছি। নিজেরা অনেক ইফিশিয়নটলি করছি। এ ইফিশিয়েন্সি বাড়ানোর আমাদের দরকার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করানো। একটা পোর্ট তখনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করবে যখন একটা আন্তর্জাতিক অপারেটর আসবে।’
বন্দর পরিচালনা করা আর টার্মিনাল অপারেট করার পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অপারেট একটা ব্যাপার। আর পরিচালনা করা আরেকটা বিষয়। বন্দর আমরাই পরিচালনা করবো। আমরা শুধু এনসিটি আগে যাকে অপারেট করতে দিয়েছিলাম তার জায়গায় হয়তো আরেকজনকে দিচ্ছি। এটা সম্পূর্ণ ইফিশিয়েন্সি বাড়াবার জন্য। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দাও না।’
ইন্টেরিম পিরিয়ডের জন্য আমরা এনসিটি ড্রাইডককে দিয়েছি। যার সঙ্গে নেভি রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, জানতে পেরেছি আগের থেকে তারা গড়ে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনেছে। এটা কিন্তু বড় ধরনের অগ্রগতি। আমি আশা করব, এটা তারা ধরে রাখবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বন্দরের ট্যারিফ আলোচনা করে বাড়িয়েছি। এককভাবে মন্ত্রণালয় বাড়ায়নি। আন্তঃমন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে এবং স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মেইন পোর্টের ট্যারিফ দেখার পর দেখা গেছে এখনো এখানে ট্যারিফ অনেক কম। এমনকি মোংলা থেকেও কম। ১৯৮৬ সালের পর বন্দরের ট্যারিফ আর বাড়ানো হয়নি। আপনি দেখেন ১৯৮৬ সালের এক টাকার মূল্য এখন কত হয়েছে!