
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) তালিকাভুক্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থারই ঠিকানা অনুযায়ী হদিস মেলেনি। ঢাকায় বেশ কিছু সংস্থার দেয়া ঠিকানায় রয়েছে বাসা-বাড়ি, যাদের কেউ পর্যবেক্ষণে জড়িত নন। কোনও কোনও ঠিকানার আবার অস্তিত্বই নেই। কিছু সংস্থার অফিসে চলে অন্য দাফতরিক কার্যক্রম।
যেমন, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করা ‘প্রত্যয়’ নামের সংস্থা, তারা ইসিতে ঠিকানা দিয়েছে রাজধানীর আদাবরের বাড়ি নাম্বার এক হাজার ত্রিশ। বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ১৭ নাম্বার রোডে গিয়ে পাওয়া যায় এই নাম্বারেরই দুইটি প্লট। যার মধ্যে একটির নির্মাণ কাজ চলছে! অপরটির বাসিন্দারা পর্যবেক্ষক সংস্থার অফিসের বিষয়ে কিছুই জানে না।
ভলান্টারি রুরাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি, ইসিতে তাদের দেয়া ঠিকানা হচ্ছে বনশ্রীর ফ ব্লকের ৭ নাম্বার রোডের ৫৯ নাম্বার বাসা। অথচ সেখানে ফ ব্লক বলে কিছুই নেই। এমনকি এফ ব্লকেও নেই ৫৯ নাম্বারের কোনও বাড়ি।
অনেক ঘোরাঘুরি শেষে দক্ষিণ বনশ্রীতে ১০/৭ নাম্বার রোডে ৫৯ নাম্বারের একটি বাসা পাওয়া গেলেও পর্যবেক্ষক সংস্থার অস্তিত্ব মেলেনি।
এদিকে, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ১৬/১৬ বাবর রোডে বিয়ান মনি সোসাইটির ঠিকানা দেয়া। তাতে বিস্তারিত আর কিছু নেই। মোহাম্মদপুরের এই বাড়ির ঠিকানায় গিয়ে দারোয়ানকে প্রশ্ন করতেই জানালেন, তিনি সেখানে বহু বছর ধরে থাকলেও সংস্থাটির নামই শোনেননি।
কাগুজে ঠিকানা বাস্তবে নেই এমন তালিকায় আরেক নাম কমিউনিটি অ্যাসিসটেন্স ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট।
বাসাবোতে জনকল্যাণ সংস্থার দেয়া ঠিকানায় একটি নির্মাণাধীন ভবন, পাশের আরেকটি ভবনে এই সংস্থার নির্বাহী প্রধানের ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট।
এদিক থেকে আলাদা সংগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থা। কাগজ ধরে অফিসের ঠিকানা মিললো। তবে সেখানে আছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। সবকটা প্রতিষ্ঠান একই মালিকের।
একই অবস্থা সমাহার মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চ এন্ড ডেভলপেমন্ট ফাউন্ডেশনের। অফিস থাকলেও কাজ হয় বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে।
আবার যেমন ইন্দিরা রোডের ডাক্তারবাড়ি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। আইনি সহায়তা থেকে শুরু করে পাঠদান কার্যক্রমও সবই চলে এখানে। প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালকের আশা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবেন তারা।
এগুলোসহ দেশীয় মোট ৭৩টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করে ইসি। তাদের নিয়ে দাবি, আপত্তি, অভিযোগ থাকলে তা ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিতভাবে জানাতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এ নিয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান বলছেন, এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদনে কমিশনকে হতে হবে সতর্ক। নয়তো এর প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষকদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে এতে, যারা ভালো পর্যবেক্ষক তারা-ও গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। একইসাথে ইসির ওপর আস্থা কমে যাওয়া, যেমন এখন আমারই কমে গেছে। তারা কী করে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান বাছাই করলো।
মুনিরা খান বললেন, পর্যবেক্ষক সংস্থা হওয়ার ক্ষেত্রে মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে অনুদান প্রাপ্তি। কমিশন যেন সেই অসঙ্গতির উপলক্ষ না হয়।
এ নির্বাচন বিশ্লেষকের মতে, ৫০০ পর্যবেক্ষকও যদি দেয়া হয়, খরচ কে দেবে, তারা নিজেরা দেবে? এই ঠিাকানা দেখে কি মনে হচ্ছে তারা টাকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করাবে। বিনামূল্যে তো আর কেউ করবে না। এইটা সরকারকে বন্ধ করতে হবে। অনেকেই হয়তো মনে করছে যে একটা নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল করবে এবং দাতাদের কাছে পয়সা চাইবে।
উল্লেখ্য, পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়ে কোনো দাবি, আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে।