

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের গুজব ও অপপ্রচার—যার মধ্যে রয়েছে গণসমাবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, লকডাউন ঘোষণার গুজব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের প্রচারণা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাজনৈতিক কার্যালয় ও কৌশলগত মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া সাদা পোশাকেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। যদিও কোনো নির্দিষ্ট হুমকির তথ্য নেই, তবু নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সোমবার (১০ নভেম্বর) থেকেই শুরু হবে ব্যাপক অভিযান।
এই অভিযানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও যুক্ত থাকবে।
লক্ষ্য—রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নাশকতার আশঙ্কা ঠেকানো।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “১৩ নভেম্বর ঘিরে বড় কোনো সহিংসতার নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর অপপ্রচার চলছে। আমরা এসব তথ্য হালকাভাবে নিচ্ছি না। রাজধানীসহ সারাদেশে চেকপোস্ট বৃদ্ধি, তল্লাশি ও অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা বিভিন্ন মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে কিছু কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন অভিযান চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা বাসে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর পরিকল্পনা করছে।”
ঢাকা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, “বড় ধরনের নাশকতা চালানো সম্ভব নয়, তবে ফেসবুক ও ইউটিউবে নানা পোস্ট নজরে এসেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।”
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, হোটেল, মেস ও বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোয় বিশেষ তল্লাশি শুরু হবে।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন,“ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের গোয়েন্দা ও সাইবার মনিটরিং টিম সক্রিয় রয়েছে। সুনির্দিষ্ট আশঙ্কা না থাকলেও র্যাব সর্বোচ্চ প্রস্তুত। অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট স্থাপনের কাজ চলছে।”
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য মাঠ প্রশাসনকে যেকোনো উস্কানিমূলক তৎপরতা প্রতিরোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, “১৩ নভেম্বরের আগে-পরে যেন কেউ ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুত। গুজব বা অপপ্রচারে কেউ কান দেবেন না—এটাই আমাদের অনুরোধ।”
রাজধানীর সাধারণ মানুষ বলছেন, পরিস্থিতি যেভাবে উত্তপ্ত হচ্ছে, তাতে ১৩ নভেম্বরের আগে ও পরে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরোতে এবং যাচাইকৃত তথ্য ছাড়া কিছু বিশ্বাস না করতে।