গণ-অভ্যুত্থান: ১৯ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে চলে গুলিবর্ষণ

গণ-অভ্যুত্থান: ১৯ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে চলে গুলিবর্ষণ
প্রকাশিত

২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যত দিন গড়াচ্ছিল শাসকের নারকীয়তার মাত্রা যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। চব্বিশের দীর্ঘ জুলাই জুড়ে চলমান রাজপথের এই উত্তাপ তখন শুধু রাজপথেই আটকে ছিল না ছড়িয়ে যায় গোটা দেশে।

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পর রক্তাক্ত জুলাইয়ের ১৯ তারিখ মাঠে নামেন অভিভাবকরাও। সন্তানের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালানোয় প্রতিবাদ জানান তারা।

কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই স্বৈরাচারী সরকার শিক্ষার্থীদের নানাভাবে কোণঠাসা করার কার্যক্রম চালাতে থাকে। দেশজুড়ে তৃতীয় দিনের মতো ইন্টারনেট বন্ধ, র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি দিয়ে ধড়পাকড়, গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যা বাড়তে থাকে জুম্মার নামাজের পর থেকে। এদিনও সারাদেশে মারা যান অর্ধশতাধিক মানুষ। এছাড়াও মোহাম্মদপুরে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হন একজন।

শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াসহ ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা, যা রূপ নেয় রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে। এরমধ্যেই নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। আর আন্দোলনকে রাজনৈতিক রঙ দেবার চেষ্টা করেন তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী। এর বিপরীতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দেয় বিএনপি।

৯ দফা দাবির মধ্যে ছিল—

১. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

২. ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র শহীদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।

৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।

৪. যে সব পুলিশ সদস্য শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ যে সব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে এবং হত্যা মামলা দায়ের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার দেখাতে হবে।

৫. দেশব্যাপী যে সব শিক্ষার্থী ও নাগরিক শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদকে কার্যকর করতে হবে।

৭. অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলসমূহ খুলে দিতে হবে।

৮. আর যে সব ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের কোনো ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

৯. শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রোধ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এদিন মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়। আটক করা হয় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকেও।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com