বাংলাদেশের সঙ্গে আইনসম্মত অভিবাসন ও সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ইতালি

বাংলাদেশের সঙ্গে আইনসম্মত অভিবাসন ও সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ইতালি
প্রকাশিত

ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্টোনিও আলেসান্দ্রো জানিয়েছেন. ইতালি বিশেষ করে অভিবাসন, বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।

রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আইনসম্মত অভিবাসন জোরদারের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ও ইতালি অভিবাসন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে একসঙ্গে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন আলেসান্দ্রো। 

তিনি আজ (সোমবার) রাজধানীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘সম্পর্ক জোরদার : বাংলাদেশ-ইতালি সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি)।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অভিবাসন অবশ্যই আইনসিদ্ধ পথে হতে হবে।’

তিনি জানান, এ বছর প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি লিবিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন, অন্যদিকে ৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বৈধ ভিসা পেয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৩০ জন শিক্ষার্থী।

রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে বলেন, অবৈধ অভিবাসন বাংলাদেশের পাসপোর্টের বৈশ্বিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে জটিল করে তোলে। তার ভাষায়, ‘ইতালিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মিথ্যা আশ্রয় প্রার্থনা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ও পাসপোর্টের মানহানি ঘটায়।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইতালি বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বজায় রাখলেও ‘ভূরাজনৈতিক স্বার্থ বা অংশীদারিত্বের কারণে কোনো দেশকেই অস্ত্র বিক্রি করে না।’

তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশ ইতালি থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করতে চাইলে তার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এককভাবে নেবে।

রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, ইতালি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।

তার ভাষায়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কার স্থিতিশীলতা বয়ে আনবে, যাতে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য না হয়।’

বিনিয়োগ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকারি নথির বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং শুল্কহার হ্রাসের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ইতালীয় কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইতালিতে রপ্তানি হয়, আর ইতালি থেকে শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অপরিহার্য, যা পারস্পরিকভাবে উপকারী প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।

তিনি জানান, ইউক্রেন যুদ্ধবিষয়ক আলোচনা কারণে স্থগিত হওয়া এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি শিগগিরই ঢাকা সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দা রোজানা রশিদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পূর্ব ইউরোপ, সিআইএস, পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

সেমিনারে বক্তারা শ্রমবাজার, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, প্রতিরক্ষা সংলাপ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ-ইতালি সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তুলে ধরেন।

দুই পক্ষই পারস্পরিক সম্মান ও কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণের অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com