
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ চলার সময় বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয় কেএফসি (কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন) এবং পিৎজা হাটের শাখাগুলোর ওপর। প্রতিবাদকারীদের দাবি, ইসরায়েলি মালিকানাধীন এসব ফাস্টফুড চেইনগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে তারা হামলা চালায়। তবে এই অভিযোগটি সঠিক নয় এবং এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এটা মনে রাখা জরুরি যে, কেএফসি এবং পিৎজা হাট উভয়ই ইসরায়েলি মালিকানাধীন নয়। কেএফসি আসলে একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স। স্যান্ডার্স ১৯৩০-এর দশকে কেন্টাকিতে একটি ছোট রেস্টুরেন্ট শুরু করেন, যেখানে ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করা হতো। ১৯৫২ সালে, স্যান্ডার্স কেএফসির প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠা করেন।
তারপর কেএফসি বিভিন্ন মালিকানার পরিবর্তন দেখেছে। ১৯৬৪ সালে কেএফসি জন ওয়াই ব্রাউন জুনিয়র ও জ্যাক সি ম্যাসির নেতৃত্বে একদল বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি হয়। এরপর একের পর এক মালিকানা পরিবর্তন ঘটে, এবং ১৯৭১ সালে কেএফসি বিক্রি হয়ে যায় হিউবলেইন কোম্পানির কাছে, যা ১৯৮২ সালে আর জে রেনল্ডস ট্যাবাক কোম্পানির অধীনে চলে যায়। পরবর্তীতে, ১৯৮৬ সালে কেএফসি পেপসিকোর অধীনে চলে আসে, যেখানে পিৎজা হাটও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯৭ সালে পেপসিকো তাদের রেস্টুরেন্ট বিভাগ আলাদা করে ‘ইয়াম! ব্র্যান্ডস’ প্রতিষ্ঠা করে এবং আজকের দিনে কেএফসি এবং পিৎজা হাট এই একই প্রতিষ্ঠানের অংশ।
বাংলাদেশে কেএফসি তাদের কার্যক্রম শুরু করে ২০০৬ সালে। যদিও কেএফসি এবং পিৎজা হাটের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি মালিকানার অভিযোগ উঠছে, তবে বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় খাদ্য এবং পানীয় কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হয়, যার কোনও সম্পর্ক নেই ইসরায়েলের সঙ্গে।
এই বিভ্রান্তি প্রতিরোধ করতে হবে, কারণ সাধারণ জনগণের মধ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিবাদ আন্দোলন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও তথ্যভিত্তিক হতে হবে, যাতে অকারণে নির্দোষ প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের ওপর আক্রমণ করা না হয়।
গাজার পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ একটি মৌলিক মানবাধিকার, তবে তা যেন সঠিক তথ্য এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেএফসি এবং পিৎজা হাটের শাখায় হামলা চালানো কোনোভাবেই এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে সহায়তা করবে না। সঠিক তথ্য জানিয়ে ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিবাদ করা জরুরি।