এ যেন মা-বাবার পুনর্জন্ম

এ যেন মা-বাবার পুনর্জন্ম
প্রকাশিত

আজ থেকে ২২ বছর আগে আমার বাবাকে এবং ১৮ বছর আগে মাকে দুনিয়া থেকে বিদায় দিতে হয়েছে। তবে তাঁদের জীবদ্দশাতেই আল্লাহর রহমতে আমার ঘর আলোকিত করে আরেক ‘মা’ দুনিয়াতে আসে। দুজনের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই—একজন গর্ভধারিণী মা, আরেকজন কলিজার টুকরা। কাউকেই অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

সহধর্মিনীকে চির বিদায় দেওয়ার পর দেশেও আমার বেশিদিন থাকা হয়নি। শেষ পর্যন্ত কলিজার টুকরা মামনির কাছেই চলে আসতে হয়েছে। পেছনে তাকালে মনে হয়—এই তো সেদিন সে দুনিয়াতে এসেছিল ! অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে আমার ছেলে-মেয়ে কতজন। আমি প্রতিবার বলেছি, আমার কোনো ছেলে নেই, তবে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পর একটি ছেলে পেয়েছি এবং সন্তানের আশা পূরণ হয়েছে।

দেখতে দেখতে সেই ছোট্ট সোনামণি আজ আরেক সোনামণির জননী। আমরা দু’জন—নানা আর নাতি—এখন তার আদরমাখা কঠোর শাসন ও নজরদারির মধ্যে আছি। কোথায় যাচ্ছি, কী খাচ্ছি, বাইরে বেশি সময় থাকব না, কোন পোশাক পরে বের হব—নানা রকমের খোঁজখবর ও পরামর্শ চলতেই থাকে। সন্তানের এই অকৃতিম ও আন্তরিক নজরদারি আনন্দের, শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার। এতে বিরক্তির কোনো সুযোগ নেই।

দেশে থাকা অবস্থায় যে সোনামণি এক গ্লাস পানি পান করতেও অন্যের সাহায্য নিত, সে এখন বাস্তবতার তাগিদে সবই নিজের হাতে সামলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করা, বাচ্চাকে ডে-কেয়ারে আনা–নেওয়া, জীবন জীবিকার তাগিদে চাকরি করা, শপিং, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, রান্নাবান্না, মেহমানদারি—সবকিছুতেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়। অবশ্য শুধু সে নয়, পুরো কানাডাবাসীকেই এভাবেই চলতে হয়।

মায়ের আদর হারানোর পর আবার যেন আরেক মায়ের আদরের মধ্যে আছি। আমরা দুজনই তার কাছে যেন ছোট আব্বু এবং বড় আব্বুর মত। একটু বাইরে গেলেই তার সতর্কতা—ঠান্ডা লাগবে না তো, এটা নাও, ওটা নাও, বেশি সময় বাইরে থেকো না, এটা খেও না, ওটা খেও না—সবই চলছে।

মাঝে মাঝে মনে হয়, মা–বাবার দোয়া–দয়া কি কোনোদিন শেষ হয়ে যাবে? কিন্তু পরবর্তীতে একই আদর–শাসন পাওয়া তো খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে। শুধু তাই নয়, জামাই বাবাজি আমাকে উচ্চস্বরে ‘বাবা’ বলে ডাকে। আমার কী দরকার—আমাকে বলতে হয় না; নিজেরাই সবকিছু, এমনকি প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়ও এনে দেন। এ সৌভাগ্যই বা কতজনের হয়?

তাই মনে হয়, জন্মদাতা পিতা আর গর্ভধারিণী মা বহু আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও এই সন্তানদের আচরণে আমি যেন আবার আমার হারিয়ে যাওয়া বাবা–মাকে ফিরে পেয়েছি।

লেখক: অধ্যাপক মোঃ ইসহাক সিকদার

প্রাক্তন অধ্যক্ষ, এম এ হাশেম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, নোয়াখালী।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com