অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ
প্রকাশিত

বাংলাদেশ এখন এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে। গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিন পেরিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। সবার প্রত্যাশা ছিল, এই সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে একটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করবে। কিন্তু আট মাসের মাথায় এসে এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা, যেখানে ভরসার চেয়ে প্রশ্ন বেশি।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূসকে নেতৃত্বে আনা হয়েছিল নিরপেক্ষতা, আস্থা এবং দক্ষতার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই তার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদকে ঘিরে বিতর্ক এবং বিশ্বাসহীনতা ঘনীভূত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের সরকারে অন্তর্ভুক্ত না করায়, পরিবর্তনের দাবিদাররাই এখন নিজ নিজ রাজনৈতিক ব্যানারে বিভক্ত। অনেকে বলছেন, এভাবে জনতার শক্তিকে সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা আত্মঘাতী পদক্ষেপ।

এর মাঝে অর্থনীতির গতি মন্থর, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনিশ্চিত, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যে বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এসেছে, তা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন, যা অন্তর্বর্তী সরকার দিতে পারে না। বরং, সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা, মব ভায়োলেন্স, এবং বিচারবহির্ভূত অনিশ্চয়তা নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: নির্বাচন কবে?
নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণার অনুপস্থিতি নানা জল্পনার জন্ম দিচ্ছে। বিরোধীদলগুলোও প্রস্তুতির কথা বলছে, তবে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে।

আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে সরকারের সবচেয়ে জরুরি কাজ একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করা। এটি হতে হবে সুনির্দিষ্ট সময়সীমাসম্পন্ন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি এবং জনসম্মতিযোগ্য। এর পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনের কাঠামোগত সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, এবং ভোটকেন্দ্র নিরপেক্ষীকরণসহ জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করে, নির্বাচন ব্যবস্থার ভাঙনই স্বৈরতন্ত্রকে সুযোগ দেয়, আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের পথ খুলে দেয়। সুতরাং, এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রকৃত সফলতা নির্ভর করছে একটি গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনে তার ভূমিকার ওপর।

অধ্যাপক ইউনূস ও তার সহকর্মীরা নিঃসন্দেহে সম্মানিত নাগরিক। তাদের ম্যান্ডেট সীমিত হলেও, দায়ভার অগণন। যদি তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, তবে ইতিহাসে তাদের ভূমিকা গৌরবময় হয়ে থাকবে। কিন্তু যদি এই সরকারও রাজনৈতিক গুমোট বাতাস পরিষ্কার না করতে পারে, তবে দেশের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।

তাই এখনই সময় রাজনৈতিক সৎ সাহস দেখানোর। সময় নির্ধারণ করুন, সংলাপ শুরু করুন, সংস্কার করুন, এবং দেশকে দিন একটি বিশ্বাসযোগ্য ভোটের আশ্বাস।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com