২৬ মার্চ কেবল একটি তারিখ নয়, এটি একটি সিদ্ধান্তের দিন। অস্ত্রহীন মানুষের বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর দিন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে আজ প্রশ্নটা শুধু অতীত স্মরণ নয়।
বরংআমরা স্বাধীনতাকে কোথায় নিয়ে এসেছি?
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল বহুমাত্রিক রাজনৈতিক মুক্তি, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য আর মানবিক মর্যাদা। সেই চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার অর্থ কি কেবল পতাকা আর জাতীয় সংগীতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে?
আজকের বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেহারা বদলেছে। যুদ্ধ নেই, কিন্তু আছে জীবনের লড়াই। দারিদ্র্য কমেছে, কিন্তু বৈষম্য রয়ে গেছে। অবকাঠামো দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সুশাসনের প্রশ্ন বারবার উঠে আসে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায়বিচার এই মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এখনো পূর্ণতা পায়নি।
স্বাধীনতার অন্যতম অঙ্গ ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়- এটি মতের বহুত্ব, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং জবাবদিহির সংস্কৃতি। স্বাধীনতার দিনে দাঁড়িয়ে তাই প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্র কতটা নাগরিকের কথা শোনে? নাগরিক কতটা রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখতে পারে?
আরেকটি বড় বাস্তবতা হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তরুণ প্রজন্ম আজ কর্মসংস্থান, ন্যায্য মজুরি ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। শিক্ষিত বেকারত্ব, বিদেশমুখিতা, দক্ষতার অপচয় এগুলো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত।
স্বাধীনতার চেতনা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তরুণেরা দেশে থেকেই স্বপ্ন দেখতে পারে।
স্বাধীনতা দিবসে শহরজুড়ে উৎসব হয়, ফুল দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত সম্মান নিহিত আছে প্রতিদিনের চর্চায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান, অন্যায়ের প্রতিবাদ, মানবিকতা ও সহনশীলতার বিকাশে।
২৬ মার্চ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- স্বাধীনতা একবার অর্জিত হয়, কিন্তু প্রতিদিন রক্ষা করতে হয়। প্রশ্ন করা, জবাব চাওয়া এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়াই স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় উদ্যাপন।
আজকের দিনে তাই শুধু গৌরবগাথা নয়, প্রয়োজন আত্মসমালোচনার সাহস। কারণ স্বাধীনতার মানে শুধু অতীতের জয় নয়- ভবিষ্যতের দায়।