বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, সংঘাত ও মানবিক সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগীদের মধ্যে কিশোরী মেয়েরাই এগিয়ে। এমন বাস্তবতার কথা তুলে ধরে তাদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)।
আন্তর্জাতিক মেয়েদের দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক বার্তায় সংস্থাটি বলেছে, প্রতিটি মেয়ের অধিকার আছে নিজের পরিচয় গড়ে তোলার, ভবিষ্যৎ নির্ধারণের এবং নিরাপদ পরিবেশে বড় হওয়ার। তবে বাস্তবে লাখো কিশোরী এমন সংকটে বসবাস করছে, যার জন্য তারা দায়ী নয়।
ইউএনএফপিএ জানায়, সংঘাত ও বিপর্যয় কবলিত দেশগুলোতে কিশোরী মেয়েরাই প্রথম শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবন রক্ষাকারী অন্যান্য সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা ও বাস্তুচ্যুতি তাদেরকে শিশু বিয়ে, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং শোষণের ঝুঁকিতে আরও বেশি ঠেলে দেয়।
তবে এসব চ্যালেঞ্জের মাঝেও কিশোরীরা শুধু ভুক্তভোগী নয়, বরং পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, এমন কথাও তুলে ধরেছে সংস্থাটি। ইউএনএফপিএর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের নানা প্রান্তে মেয়েরা নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে, ক্ষতিকর সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং পরিবার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে।
বার্তায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক মেয়েদের দিবস শুধু উদযাপনের দিন নয়; এটি মেয়েদের সম্ভাবনা ও সক্ষমতার স্বীকৃতি দেওয়ারও একটি মুহূর্ত। তবে সংকটময় এই বিশ্বের সব বোঝা তাদের একার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
ইউএনএফপিএ আরও জানায়, সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোতে কিশোরীদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। এমন জায়গা প্রয়োজন, যেখানে তারা কথা বলতে পারবে, মানসিক সহায়তা পাবে, দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে, সে স্কুলে থাকুক বা না থাকুক।
সংস্থাটির মতে, বয়স ও বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা এবং জীবনদক্ষতা কিশোরীদের নিরাপদভাবে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রবেশে সহায়তা করে। এ কারণে বিভিন্ন দেশে তরুণদের জন্য নিরাপদ স্থান, পরামর্শসেবা, প্রশিক্ষণ ও মানসিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যাতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার পাশাপাশি সমাজ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইউএনএফপিএ জোর দিয়ে বলেছে, কিশোরী ও যুবতীদের নেতৃত্ব, অধিকার ও দক্ষতা বিকাশে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রতি বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। স্বাস্থ্য, অধিকার, উন্নয়ন ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় মেয়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়।
বার্তার শেষাংশে বলা হয়, যখন কোনো মেয়ে তার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে আসে, তখন তার জানা দরকার, বিশ্ব তার পাশে আছে। শুধু তার হয়ে নয়, বরং তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
ইউএনএফপিএ বিশ্বনেতা ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে- যেখানেই তারা থাকুক, সব কিশোরী মেয়ের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং তাদের সম্ভাবনা বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তা জোরদার করতে।
তথ্যসূত্র- UNFPA