
লেখকঃ ড. মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান
প্রকৃতির রূপ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এবং ভ্রমণের মাধ্যমে মানব জীবনে একটি নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয় পর্যটন। তবে, পর্যটনকে টেকসইভাবে বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এর নেতিবাচক প্রভাব যেমন পরিবেশ দূষণ ও সমাজের উপর অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মাইনুল হাসান, পিপিএম, এনডিসি সম্প্রতি ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি গবেষণার ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় বলেন, প্রায় ১৫০০ প্রশিক্ষিত সদস্যের ট্যুরিস্ট পুলিশ শুধুমাত্র পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন না, বরং পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় তাদের অবদানও অপরিসীম। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পর্যটন এলাকাগুলির পরিবেশ সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব, যা পর্যটনের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য ও টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। তিনি আরও বলেন যে পর্যটন শিল্প একটি দেশের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক পরিচিতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পের সাফল্য এবং টেকসই উন্নয়নে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরিহার্য। ট্যুরিস্ট পুলিশ এমন একটি শক্তিশালী বাহিনী, যাদের ভূমিকা পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা প্রদান করা। পর্যটন মৌসুমে বিশেষত ট্যুরিস্ট পুলিশকে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তাদের কার্যক্রম বাড়াতে হয়, যেমন সাগর, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান ও দ্বীপাঞ্চল। তবে মৌসুম ব্যতীতও এই বাহিনী বিভিন্ন স্থানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, যেমন স্থানীয় পর্যটন এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, হোটেল বা ট্রানজিট পয়েন্টে যেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা প্রয়োজন সেখানকার সার্বিক পরিবেশের দেভভাল ও উন্নয়ন। তাদের উপস্থিতি শুধু নিরাপত্তাই নিশ্চিত করে না, বরং পর্যটকদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট পুলিশের সম্ভাবনা (পোটেনশিয়ালস) অনেক। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং নিরাপদ, দায়িত্বশীল পর্যটন নিশ্চিত করতে এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিচে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরা হলো:
দুই. ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ অন্যতম। এটি শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সম্পত্তির রক্ষা এবং জরুরি অবস্থায় সহায়তা প্রদান করা নয়, বরং তাদের ভ্রমণের স্বাচ্ছন্দ্য ও সুরক্ষিত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই বাহিনী পর্যটকদের জন্য একটি সরাসরি সহায়তা প্রদানকারী ভূমিকা পালন করে, যেমন হোটেল বা পর্যটন স্থানগুলিতে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া, স্থানীয় পরিবেশের সাথে পরিচিতি এবং নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করা। এছাড়া, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভাষাগত সহায়তা ও আন্তঃসংস্কৃতি বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটকদের ভাষাগত বাধা দূর করতে, ট্যুরিস্ট পুলিশ ভাষার দক্ষতার মাধ্যমে তাদের সহজে বোঝার সুবিধা প্রদান করে, যা পর্যটন অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে। এটি পর্যটকদের মাঝে একটি স্বস্তির অনুভূতি তৈরি করে, কেননা তারা জানে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেখানে একজন সহায়ক এবং জানাশোনা ব্যক্তির উপস্থিতি তাদের সহায়তা করবে। জরুরি পরিস্থিতিতে, ট্যুরিস্ট পুলিশ দ্রুত সহায়তা প্রদান করে, যা তাদের সুরক্ষা এবং সুস্থ অবস্থায় থাকার নিশ্চয়তা দেয়। এর মাধ্যমে, পর্যটন এলাকার পরিবেশ আরও নিরাপদ এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে।
তিন. ট্যুরিস্ট পুলিশ শুধুমাত্র পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে না, তারা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পর্যটন প্রচারণা। ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম ও তাদের সেবার মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করা সম্ভব, যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে ইকো-ট্যুরিজম এবং সাংস্কৃতিক পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রাকৃতিক এবং ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোতে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যাতে পর্যটন কার্যক্রম টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব হয়। তারা স্থানীয় জনগণের সাথে মেলবন্ধন তৈরি করে এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করে, যা সুষ্ঠু এবং দীর্ঘমেয়াদী পর্যটন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। পর্যটন শিল্পের উন্নতি স্থানীয় অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, কারণ পর্যটন এলাকা থেকে ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং স্থানীয় পণ্যের চাহিদা ও প্রসার বৃদ্ধি পায়। ট্যুরিস্ট পুলিশ স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে সমর্থন প্রদান করে, যাতে ব্যবসায়িক এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটে, ফলে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী হয়।
চার. ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের প্রধান কাজ হলো পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে তারা নিজেদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিরাপদ ও উপভোগ্যভাবে কাটাতে পারে। এটি শুধুমাত্র চুরি, হয়রানি, বা প্রতারণার মতো অপরাধ দমন করেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অপরাধমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া, যেমন মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার প্রতিরোধ করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এসব অপরাধ প্রতিরোধে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি, কারণ এ ধরনের অপরাধের ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে এবং পর্যটন শিল্পের প্রতি আস্থা কমে যেতে পারে। এর পাশাপাশি, জরুরি সাড়া প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ দ্রুত সেবা প্রদান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে, যাতে পর্যটকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দ্রুত পায় এবং তাদের ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। এর মাধ্যমে শুধু অপরাধ প্রতিরোধই হয় না, বরং বিপদে পড়া পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা এবং সহায়তার পরিবেশ তৈরি করা হয়, যা তাদের ভ্রমণকে আরও সুরক্ষিত ও সহজ করে তোলে।
পাঁচ. পর্যটন এলাকা গুলির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি, পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং সচেতনতার প্রচারণা চালানো তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে স্থানীয়দের ও পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে, যাতে পর্যটন কার্যক্রম প্রাকৃতিক সম্পদে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। এটি শুধুমাত্র দৃশ্যমান পরিবেশের সুরক্ষা নয়, বরং অদৃশ্য পরিবেশগত ক্ষতি প্রতিরোধের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা হয়। এক্ষেত্রে, তারা প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষা এবং ক্ষতিপূরণের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যাতে পর্যটন শিল্প পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি না করে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, বিশেষ করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে অবৈধ কার্যক্রম যেমন শিকার এবং বনজসম্পদ লুণ্ঠন বন্ধ করা তাদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো পর্যটন শিল্পের সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক হয় এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে।
ছয়. ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে আরও সফল হতে পারে। কমিউনিটি পুলিশিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় একটি নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করে। এটি পর্যটকদের এবং স্থানীয়দের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা পর্যটন এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষা এবং সংরক্ষণেও ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা অপরিহার্য। স্থানীয় জনগণের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে পর্যটন কার্যক্রম স্থানীয় মানুষের জন্যও উপকারী হয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশেও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করতে পারে, যেমন ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে স্থানীয় জনগণকে আরো সক্রিয় অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলা, যাতে তারা পর্যটন শিল্পে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই পদক্ষেপগুলো স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নত করতে সহায়তা করবে এবং পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
সাত. ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর এবং সুনির্দিষ্ট করে তুলতে পারে, যা পর্যটন শিল্পের সুরক্ষা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য হেল্পলাইন, মোবাইল অ্যাপ, এবং তথ্য সেবার সুবিধা প্রদান করে, তারা সহজেই পর্যটন স্থান, নিরাপত্তা সেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এই প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলি তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সহজ ও সুরক্ষিত করে তোলে। একইভাবে, নজরদারি বৃদ্ধি করতে ড্রোন, ক্যামেরা এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা পর্যটন এলাকায় সুরক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক। প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যটকদের প্রবাহ এবং আচরণ সম্পর্কিত ডেটা সংগ্রহ করা, তাদের চাহিদা এবং সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের নীতিমালা এবং কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করতে পারে, ফলে পর্যটন শিল্পের আরও উন্নয়ন এবং দক্ষতা সাধিত হবে।
আট. বৈশ্বিক পর্যটন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা জরুরি। ট্যুরিস্ট পুলিশকে আন্তর্জাতিক পর্যটন নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে কাজ করতে হবে, যা পর্যটকদের জন্য বিশ্বস্ত এবং নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে। বিশেষত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, এবং বাণিজ্যিক ইভেন্টগুলোর সময়, ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ধরনের ইভেন্টে পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং পরিবেশ বজায় রাখতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে, বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ এবং আতিথেয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে, যা বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পে আন্তর্জাতিক আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকবে।
নয়. টেকসই পর্যটন গড়ে তোলার জন্য জলবায়ু অভিযোজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন নীতি গ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব, যাতে পর্যটন এলাকা পরিবেশগতভাবে টেকসই থাকে এবং ভবিষ্যতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ এই উদ্যোগে ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষত স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটন এলাকার অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সেগুলোকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত পর্যটন চাপের কারণে স্থানীয় পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
পরিশেষে, ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা শুধু পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না, বরং স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশের সুরক্ষায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, জরুরি সাড়া প্রদান এবং অপরাধ প্রতিরোধের মাধ্যমে, ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন শিল্পের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। বিশেষত, ডিজিটাল সেবা যেমন হেল্পলাইন এবং মোবাইল অ্যাপ, পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক, যা তাদের ভ্রমণকে আরও সহজ এবং সুরক্ষিত করে তোলে। তাছাড়া, পর্যটন এলাকার সুরক্ষা এবং নজরদারি বৃদ্ধির জন্য ড্রোন ও ক্যামেরার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া, ট্যুরিস্ট পুলিশের আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ ও ইভেন্ট পর্যটনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে, বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ এবং আতিথেয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের পর্যটন খাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে। টেকসই পর্যটনের প্রসারে, ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যার মাধ্যমে দেশের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত থাকবে।
এই সকল কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ট্যুরিস্ট পুলিশ যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হয় এবং তাদের কার্যক্রমে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়, তবে এটি শুধু পর্যটন শিল্পকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং দেশের ভাবমূর্তি এবং অর্থনীতি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, তাদের জীবিকা উন্নয়নেও সহায়তা করবে। এইভাবে, ট্যুরিস্ট পুলিশ একটি সুরক্ষিত, টেকসই এবং সফল পর্যটন শিল্প গড়ার পথে একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে কাজ করবে, যা বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
ড. মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান
ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।