রেমিট্যান্স আয়ে রেকর্ড প্রবাসীদের, প্রবাসীদের জন‍্য রাষ্ট্রের করণীয় কি?

রেমিট্যান্স আয়ে রেকর্ড প্রবাসীদের, প্রবাসীদের জন‍্য রাষ্ট্রের করণীয় কি?
প্রকাশিত

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় রেমিট্যান্স এখন একটি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করে আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়তা করে। রেমিট্যান্স- একই সঙ্গে টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দারুণভাবে সহায়তা করছে।

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে শুরু করেন। তখন থেকে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো আরম্ভ করেন। প্রবাসীদের এই রেমিট্যান্স অর্থনীতির একটি প্রধান খাত হিসেবে জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ।

যদিও বৈদেশিক মুদ্রার এই বিরাট উৎস তথা বাংলাদেশী প্রবাসীদের সঠিক সংখ্যা এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রবাসীদের কল‍্যাণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সেটা কখনওবা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া তৎকালীন আওয়ামী লীগের সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জাতীয় সংসদের একটি বক্তব্যে জানিয়েছিলেন যে জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীর সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৬০ জন।

বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যেসব দেশে তার মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা অন্যতম। এসব দেশগুলোতে প্রায় ৩৬.৪৫ শতাংশ প্রবাসীরা বাস করেন। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাস করেন প্রায় ৫০ লক্ষ থেকে ৭০ লক্ষ প্রবাসী যার মধ‍্যে সৌদি আরবেই বাস করেন ২৫ লক্ষেরও বেশি প্রবাসী। সে হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বিদেশী শ্রমবাজারের দিক থেকে ভারত ও পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

বাংলাদেশী প্রবাসীদের অধিকাংশই সাধারণত টেকনিশিয়ান, গৃহস্থালি, নির্মাণ শিল্প ও কৃষি শিল্প কর্মে নিয়োজিত। পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে, সুপার সপে, ড্রাইভিংয়ে এবং সেল্ফ এমপ্লয়েড হিসেবেও অনেকে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া প্রবাসীদের মধ‍্যে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার এবং চিকিৎসক রয়েছেন, যারা দেশে বিপুল অংকের রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন।

এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে একজন প্রবাসী এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পরিবার ও পরিজনদের মায়া ত‍্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। এজন্য তাকে যথাযথ কর্মসংস্থানের সুযোগ, পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা, সামাজিক স্বীকৃতির অভাবসহ নানাবিধ চ‍্যালেন্জসমূহ মোকাবেলা করতে হয়।

রাষ্ট্র অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই গল্পগুলোর ভাগীদার হতে না পারলেও প্রবাসীদের কষ্টার্জিত প্রতিটি ডলারের ভাগীদার ঠিকই হয়ে থাকে। অথচ রাষ্ট্রের উচিৎ প্রবাসীদের সংগ্রাম ও কষ্টের গল্পগুলোর প্রতি গভীর মনোযোগী হওয়া। দুঃখজনক হলেও সত‍্যি যে সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু প্রবাসীদের কষ্টগুলো প্রবাসীদের বুকে ঠিকই রয়ে যায়।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থাৎ ৪৮ বছরের ইতিহাসে বিএমইটি রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ১১ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৩৩ জন কর্মী বিদেশে প্রেরণ করে ব‍্যাপক আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ডিজিটাল অভিবাসন প্ল্যাটফর্ম 'আমি প্রবাসী' এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় য়ে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের অর্জন আরো ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে, যেটি রীতিমতো একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

তবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিসার্চ মুভমেন্টস (রামরু) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে ২০২৪ সালে মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৫৯ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ‍্যে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা মাত্র ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৪ জন, যা মোট শ্রমবাজারের প্রায় ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। একই সময়ে স্বল্পদক্ষ কর্মী (অদক্ষ) হিসেবে বিদেশে গেছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার ৪৮০ জন বা ৫৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।

স্বল্পদক্ষ বা অদক্ষতার মতো প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেও ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবাসীরা প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যার ফলে রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৭ম স্থান লাভ করে। বিশ্বে রেমিট্যান্স আয়ে শীর্ষ ছিল ভারত। তারা ২০২৪ সালে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। যা যে কোনো দেশের এক বছরে পাওয়া সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এ ছাড়া, গত বছর বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের মধ্যে ভারত একাই নিয়ে গেছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

একই বছরে এশিয়ার মধ‍্যে রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ম, ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার আয় করে পাকিস্তানের অবস্থান ৪র্থ, ৪ হাজার কোটি ডলার আয় করে ফিলিপাইনের অবস্থান ৩য় এবং ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয় করে ২য় অবস্থানে রয়েছে চীন।

তবে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় প্রবাহের সকল রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বিবেচনা করলে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, মার্চ মাসেই সৃষ্টি হয়েছে নতুন রেকর্ড। কারণ গত ইদকে সামনে রেখে এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৩২৯ কোটি ডলার বা তার বেশি। যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার যেটাও একটি সিঙ্গেল মাসে পূর্বের তুলনায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিলো। পরিসংখ্যান বলছে গত ১০ বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিলো প্রায় ১৭ হাজার ৭৫৯ কোটি ডলার। যার মধ‍্যে ২০২৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ‍্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পনেরো বছরের শাসনকালের সমাপ্তি ঘটে। এরপর থেকে আকস্মিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যা এখনও পর্যন্ত একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছে।

বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের আবারও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। যেটি ধরে রাখতে নীতিনির্ধারকদের কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি। কারণ এখনও পর্যন্ত প্রবাসীদের অনেক দাবী-দাওয়া কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।

প্রকৃতপক্ষে প্রবাসীদের পাশে না দাড়ালে বা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির অন্তরায়গুলো দূর করতে না পারলে রেমিট্যান্স আয়ের দৃশ্যমান রেকর্ড ভঙ্গের প্রেরণাগুলো হালে পানি পাবে না। যা প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে একটি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রবাসীদের জন‍্য অনেক দৃশ‍্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটা স্বীকার না করলে সত্যের অপলাপ হবে। তবে এখনও পর্যন্ত প্রবাসীদের জন্য বেশকিছু অমিমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে যা মিমাংসা করার এখনই উপযুক্ত সময়, সেগুলোর মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া রাষ্ট্রের জন‍্য অত‍্যন্ত জরুরি-

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে হুন্ডির দৌরাত্ম্য দূর করতে হবে। অনেক প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অবৈধ উপায়ে (হুন্ডির মাধ্যমে) টাকা পাঠান, যা বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংকিং লেনদেন পদ্ধতিকে আরও গ্রহণযোগ্য, দ্রুততর, সহজসাধ্য ও আকর্ষণীয় করতে হবে।

সরকারি উদ্যোগে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতার ঘাটতির ফলে তারা কম বেতনে কাজ করেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রযুক্তি ও ভাষাজ্ঞান উন্নত করা প্রয়োজন। দেশে বিদেশগামীদের জন‍্য দক্ষ করতে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) থাকলেও সেখানে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই।

প্রবাসীদের কর্মসংস্থান সংকটগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। এছাড়া শ্রমিক নির্যাতন সংক্রান্ত ঘটনাগুলোতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ‍্যমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রবাসীদের সাথে নির্ধারিত চুক্তি বা বেতন নিয়ে সকল প্রকার প্রতারণার বিপক্ষে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে দেশের জাতীয় বাজেটে রেমিট্যান্স নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। সেজন‍্য দেশের সামগ্রিক রপ্তানি ও স্থানীয় উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। পাশাপাশি আমাদের দেশের অর্থনীতির অন‍্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের কল্যাণে যথাযথ ও দ্রুততর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রবাসীদের জন‍্য বিশেষ ইনস্যুরেন্স ব‍্যবস্থা চালু করতে হবে। ব‍্যাংকিং চ‍্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন‍্য বাস্তবায়িত ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রনোদনাকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ করা যেতে পারে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রবাসীর পরিবারের লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও হেল্থ ইন্স্যুরেন্স কভারেজ হিসেবে ব‍্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স ব‍্যবস্থা চালু করা ব‍্যাংকগুলোর সহায়তা ও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

প্রবাসীদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা ব‍্যবস্থা জোরদার করা। অধিকাংশ প্রবাসীর তাদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বিপদে পড়লে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতোও কেউ থাকে না। এমনকি অনেক প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকায় অর্জিত সম্পদও অনেক সময় বেদখল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যথাযথ ও কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে প্রবাসীদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা ব‍্যবস্থা জোরদার করা সম্ভব।

প্রবাসীদের সন্তানের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ সুবিধা প্রদান। যে সকল প্রবাসীরা নিয়মিত ব‍্যাংকিং চ‍্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠান তাদের সন্তানদের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি ও অন‍্যান‍্য খরচের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা চালু করা যেতে পারে। এতে প্রবাসী ও তাদের পরিবারকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত করা সহজতর হবে।

প্রবাসীদের জন‍্য পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়ন আরো সহজতর করা যেতে পারে। পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে ডিজিটালি তাদের তথ‍্য ও ছবি হালনাগাদ করা যেতে পারে। এছাড়া প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও অন্যান্য সনদপত্রও ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেরিফিকেশন ও ইস্যু করার ব‍্যবস্থা করা যেতে পারে।

প্রবাসীদের আগমন ও প্রস্থানের জন‍্য বিমানবন্দরকে স্বস্তির জায়গায় উন্নীত করতে হবে। অধিকাংশ প্রবাসীদের অভিযোগ থাকে যে বিমানবন্দরে তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। অনেক সময় তাদের মূল‍্যবান জিনিসপত্র খোয়া যায়, এমনকি অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব কারণে অনেক প্রবাসীর স্বস্তির বিদেশ যাত্রা বা দেশে আশা বিষাদে পরিণত হয়।

বর্তমান সরকার প্রবাসীদের কিছু জিনিস আমলে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতরে একটি ভিআইপি লাউন্জ তৈরী করে দিয়েছেন যেটি ব‍্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তবে বিমানবন্দরে প্রবাসীদেরকে সত্যিকার অর্থে ভিআইপি হিসেবে বা তাদেরকে দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের গুটিকয়েক দেশের মধ‍্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পাশাপাশি ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে জনশক্তি রপ্তানির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই দেশগুলোর শ্রমবাজারে প্রবেশের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়ানো সম্ভব।

একটি বিষয় খুবই পরিষ্কার, তা হলো রেমিট্যান্সের শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে পরিবারের জীবনমান উন্নত করে না, বরং জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তিকে ক্রমাগত মজবুত করে থাকে। রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ যদি উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে তার বিশাল ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সহজ শর্তে ঋণ ও অন‍্যান‍্য ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। সেগুলো করতে হলে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে প্রবাসীদের কল‍্যাণে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

লেখকঃ এম এম মাহবুব হাসান, ব‍্যাংকার ও উন্নয়ন গবেষক

ই-মেইল: mmmahbubhasan111@gmail.com

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com