আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে রাজনীতি দায় কার, লাভ কে পায়?

আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে রাজনীতি দায় কার, লাভ কে পায়?
প্রকাশিত

আইনশৃঙ্খলা- শুনতে প্রশাসনিক শব্দ। কিন্তু বাস্তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর একটি। কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই শুরু হয় রাজনৈতিক দোষারোপ, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, আর দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতা। প্রশ্ন একটাই—আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে দায়টা আসলে কার, আর এই পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয় কে?

নিরাপত্তা যখন রাজনীতির ভাষায় কথা বলে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে এই দায়িত্বটি প্রায়ই রাজনৈতিক ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়। সহিংসতা হলে বলা হয়—‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’, অপরাধ বাড়লে বলা হয়, ‘বিরোধীদের নাশকতা’। আবার বিরোধীরা বলে, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ’, ‘শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা’।

এখানে সমস্যা অপরাধের নয়, সমস্যা হলো অপরাধকে কীভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা আর নাগরিক নিরাপত্তার বিষয় থাকে না, হয়ে ওঠে রাজনৈতিক বক্তব্যের অস্ত্র।

দায়ের রাজনীতি: কেউই দায় নিতে চায় না

আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলে স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে- দায় কার? প্রশাসনের? সরকারের? নাকি পুরো ব্যবস্থার?

কিন্তু রাজনীতিতে দায় নেওয়া প্রায় নিষিদ্ধ একটি শব্দ। সরকার বলে- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, বিরোধীরা বলে—পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রশাসন থাকে মাঝখানে, তাদের কাজের মূল্যায়নও হয় রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে।

ফলে বাস্তব দায়টা ঝুলে থাকে। কেউ দায় নেয় না, কিন্তু সবাই পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেয়।

অপরাধী নয়, আলোচনায় থাকে রাজনীতি

অদ্ভুত এক বাস্তবতা, অনেক সময় অপরাধের চেয়ে অপরাধকে ঘিরে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াই বেশি আলোচনায় আসে। অপরাধী কে, কীভাবে ঘটনা ঘটল, ভবিষ্যতে কীভাবে ঠেকানো যাবে, এসব প্রশ্ন চাপা পড়ে যায় রাজনৈতিক বাকযুদ্ধের ভিড়ে।

এতে করে অপরাধ দমনের জায়গাটা দুর্বল হয়, আর রাজনীতির জায়গাটা আরও তীব্র হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: পেশাদারিত্ব বনাম রাজনৈতিক চাপ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এখানে সবচেয়ে জটিল। একদিকে তাদের দায়িত্ব পেশাদারভাবে কাজ করা, অন্যদিকে রাজনৈতিক বাস্তবতার চাপ সামলানো। অনেক সময় এই চাপ এতটাই প্রকট হয় যে বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

ফলে জনগণের চোখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকে না। আস্থার এই সংকট আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।


লাভ কে পায় এই পরিস্থিতিতে?

এই প্রশ্নটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে- এটা নিশ্চিত। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কিছু পক্ষ লাভবান হয়।

  • ক্ষমতাসীনরা কঠোরতার যুক্তি দাঁড় করাতে পারে

  • বিরোধীরা সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের সুযোগ পায়

  • রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু উন্নয়ন বা নীতি থেকে সরে গিয়ে নিরাপত্তায় আটকে যায়

ফলে রাজনীতির ভাষা শক্ত হয়, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না।

সাধারণ মানুষের জায়গা কোথায়?

এই পুরো চিত্রে সবচেয়ে অবহেলিত থাকে সাধারণ মানুষ। তারা চায় নিরাপত্তা, রাজনীতি নয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা যখন রাজনীতির অংশ হয়ে যায়, তখন নাগরিক নিরাপত্তা গৌণ হয়ে পড়ে।

মানুষ বুঝে যায়, এখানে কথা হচ্ছে ক্ষমতার, নিরাপত্তার নয়।


বের হওয়ার পথ কি রাজনীতির বাইরে?

আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি রাজনীতির বাইরে রাখা সম্ভব কি না- এ প্রশ্ন জটিল। তবে একে পুরোপুরি রাজনৈতিক অস্ত্র বানানো যে ক্ষতিকর, তা স্পষ্ট।

দায়িত্বশীল রাজনীতি, প্রশাসনিক জবাবদিহি আর নাগরিক আস্থাই পারে এই সংকট কিছুটা হলেও কমাতে। আইনশৃঙ্খলা ইস্যুকে যদি রাজনৈতিক পয়েন্ট স্কোরিংয়ের জায়গা না বানানো যায়, তাহলে অন্তত সমস্যার সমাধানের দিকে যাওয়া সম্ভব।

শেষ কথা

আইনশৃঙ্খলা কোনো দলের একক ব্যর্থতা বা সাফল্যের গল্প নয়। এটা রাষ্ট্রের সক্ষমতার প্রতিফলন। কিন্তু যখন এই ইস্যু রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হয়, তখন দায় কেউ নেয় না, লাভ নেয় রাজনীতি, আর ক্ষতিটা বহন করে সাধারণ মানুষ।

প্রশ্ন তাই থেকেই যায়- আইনশৃঙ্খলার এই রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত জিতছে কে?

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com