
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ও দুপুরে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের গড়েয়া এবং শুকানপুকুরী ইউনিয়নে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে সব দলের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আর বিভাজন করবেন না, আর কোনও দাবি তুলে বিভেদ তৈরি করবেন না। পিআর নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, যেটা পরবর্তী সংসদে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু না, তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। গণভোট, পিআর নিয়ে আর আন্দোলন করবেন না। নির্বাচনটা হতে দিন, দেশের মানুষ বাঁচুক। দেশের মানুষকে বাঁচাতে তাড়াতাড়ি ভোট হতে দিন।
‘যারা আন্দোলন করছেন তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো না, তারা ভণ্ডুল করতে চায় নির্বাচনকে। সবাই ভোট দিতে চায়। দয়া করে নির্বাচনটা করতে দিন, নির্বাচিত সংসদ আসুক, পরে এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। হিংসার রাজনীতি করতে চাই না।’
জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ যে প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তিনি সংসদে গিয়ে আপনাদের জন্য কথা বলবেন– সেটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সে নিয়মে ভোট হয়ে এসেছে। তবে এবারের নির্বাচন একটু ভিন্ন, যেখানে পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ থাকবে, উচ্চ ও নিম্নকক্ষ। নিম্নকক্ষে দল থেকে মনোনীত এবং আপনাদের ভোটে নির্বাচিত প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। আর উচ্চকক্ষে যারা প্রতিনিধি হবেন তারা আলেম সমাজের মানুষ, বিজ্ঞ সমাজ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই থাকবেন সেখানে– যারা আপনাদের নিয়ে কাজ করবেন ও কথা বলবেন। সবাই মিলে থাকাটাই বাংলাদেশ। “শত ফুল ফুটতে দাও”– সব ফুল ফুটলে সৌরভটা ছড়িয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হিংসার রাজনীতি চাই না। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান বিভেদ চাই না, সবাই মিলে থাকতে চাই। শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রই বিএনপির চাওয়া। ভাগাভাগি আর না করেন, ক্ষতি অনেক হয়েছে। ক্ষতি আর চাই না। সৌহার্দ্য-ভ্রাতৃত্বের মধ্যে থাকতে চাই সবাই।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজ জেলায় আসতে না পারার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৫ বছর ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে থাকতে হয়েছে, জেলখানায় থাকতে হয়েছে। ১১ বার জেলে গেছি, সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করতেন, আমি তার ভয়ের কারণ, তাই কারাগারে যেতে হতো।’
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এ সনদে স্বাক্ষর করা হবে। কঠিন শব্দ জনগণ কম বোঝে, তারপরও এটা করা হবে, সবাই যা নিয়ে একমত হয়েছেন, তা নিয়ে সনদ হবে। সনদ হচ্ছে ঘরে নতুন টিন লাগানোর মতো। ঘরের চালে নতুন টিন লাগানো হচ্ছে, দরজায় কব্জা লাগাতে হবে জং ধরেছে, সংস্কারও তাই। দেশের রাজনীতিভ সংস্কার করতে হবে, সেজন্যই সংস্কার করছি আমরা। সংস্কার প্রস্তাবের যেগুলোতে একমত হয়েছি, সেগুলোতে স্বাক্ষর হবে আর যেগুলো হয়নি সেগুলোর জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের সমর্থন লাগবে।’
মঙ্গলবার থেকে নিজ নির্বাচনি এলাকার এক প্রান্ত অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট টানতে নিজ সংসদীয় আসনে জনসংযোগ করছেন তিনি।
আজকের জনসংযোগের সময় বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর শাখা সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ, সদর উপজেলা সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাফরুল্লাসহ দলটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।