পুলিশি বাঁধার মুখে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ কয়েকটি সংগঠনের মিছিল
বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী লালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল ইজারা চুক্তি বাতিল এবং নিউমুরিং ও পতেঙ্গা টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজধানীর যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) পুলিশ বাঁধা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোট রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কাকরাইল পর্যন্ত এগোলে পুলিশ সেখানেই বাধা দিয়ে তাদের কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়।
বিক্ষোভ মিছিলে তারা ‘ইজারা দেওয়ার দাবিতে, যমুনা ভবন ঘেরাও হবে’, ‘ইউনূস তুমি বাড়ি যাও’, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক নিপাত যাক’, ‘দুনিয়ার মজলুম এক হও লড়াই করো’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা বলেন, জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।
তারা বলেন, গত ২৭ ও ২৮ জুন দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। দেশের সচেতন মানুষ সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
তারা আরও বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। এরই মধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ নিষিদ্ধ। যারা কর্মসূচি দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় কথা হয়েছে। তারপরও তারা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় তাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। এটাকে সেই অর্থে লাঠিপেটা বলা যাবে না। তাদের যমুনার দিকে যেতে বাধা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। এতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফি, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহুল আমিনসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
পরে বিক্ষোভকারীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
উল্লেখ্য, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। আজ বেলা ১টা ১০ মিনিটে এ ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা কাকরাইল মোড় ছেড়ে দেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।
এদিকে, এই হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের "ছাত্র গণমঞ্চ'র" এর উদ্যোগে হওয়া প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মার্কিন সম্রাজ্যবাদ ও ভারত সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
উক্ত কর্মসূচি থেকে "গোবিপ্রবি ছাত্র গণমঞ্চ'র" সভাপতি নিঘাত রুদ্র বলেন, মার্কিন সম্রাজ্যবাদের পুতুল সরকার যেভাবে দেশ তাদের হাতে লুটিয়ে দিচ্ছে, তাতে শীঘ্রই জনগণের ওপর নির্দয় নিপীড়ন নেমে আসবে।
