ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের পথরেখা সফল করুন: জোনায়েদ সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের বর্ণাঢ্য মাথাল র‍্যালি ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের পথরেখা সফলের আহ্বান
ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের পথরেখা সফল করুন: জোনায়েদ সাকি
প্রকাশিত

গণসংহতি আন্দোলন - জিএসএর প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি। আর এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে বিচার সংস্কার, নির্বাচন তার যে পথরেখা ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই পথরেখাকে সফল করতে হবে।

আজ শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, বিকাল ৩টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসংহতি আন্দোলন - জিএসএর রাজনৈতিক দল হিসেবে এক দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ ও মাথাল র‍্যালিতে সভাপতির বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।

সমাবেশের পর বর্ণাঢ্য এক মাথাল র‍্যালি শাহবাগ, বাংলামোটর ও মগবাজার এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মাথাল গণসংহতি আন্দোলনের দলীয় প্রতীক। দলের নেতাকর্মীবৃন্দ মাথায় মাথাল পরে, হাতে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক উৎসবমুখর শোভাযাত্রা করেন দল হিসেবে এক দশক পূর্তির এই আয়োজনে। এসময় স্থানীয় জনগণও এই শোভাযাত্রায় সানন্দে অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশের সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ যাতে ঐক্যে কোনোভাবে ফাটল ধরাতে না পারে তার জন্য আপনাদের সদা প্রস্তুত, সদা সতর্ক এবং সদা চেষ্টা করে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একটা ভীষণ জাতীয় সংকটের মধ্যে আছি। দেশের অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা এখনও বিপর্যয় কাটিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আমাদের মৌলিক সংস্কার দরকার। সমস্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার দরকার। এবং এই সবকিছু থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের নির্বাচন দরকার। আমাদের দরকার গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন, যেটা একইসাথে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, যে রাষ্ট্র ন্যায়বিচার দিতে পারে না সেই রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও নতুন যাত্রা ন্যায়বিচারের উপর দাঁড়াতে হবে। সকল হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, সব ধরনের লুটপাট এবং ঘরে-বাইরে যত ধরনের অপরাধ হয়, মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেই রকম ব্যবস্থা আমাদের কায়েম করতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, এই দেশের মেহনতি, খেটে খাওয়া মানুষ, এই রাষ্ট্রে তাদের ন্যায্য হিস্যা চায়। সেই অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সহ রাষ্ট্রের সমগ্র পরিকল্পনা তৈরি হতে হবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা ঘৃণা, বিভাজন, নানারকম ট্যাঁগিং করে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বদলে আজকে যারা ধর্মের নামে, আজকে যারা জাতি পরিচয়ের নামে বিভাজন তৈরি করতে চায়, ট্যাঁগিং তৈরি করতে চায়, নানাভাবে ঘৃণা উৎপাদন করতে চায়, যারা মানুষকে অপমানিত করে, মব তৈরি করে নিজের মত চাপিয়ে দিতে চায়, এই সমস্ত জবরদস্তিকে অভ্যুত্থান না বলে দিয়েছে। তিনি বলেন, একদল ওই ঘৃণা, বিভাজন এবং ট্যাঁগিংয়ের পলিটিক্স করে আরেকটা জবরদস্তিমূলক শাসন কায়েম করতে চায়। অভ্যুত্থান পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে, এক ফাসিবাদের বদলে অন্য কোনো জবরদস্তি বাংলাদেশের মানুষ সহ্য করবে না।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই দেশ স্বাধীন সার্বভৌম মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। পৃথিবীর সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের মর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে আমরা সুসম্পর্ক করতে চাই। কিন্তু কোনো দেশের কাছে পরাধীন হতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে ভারতীয় কর্তৃত্বকে না বলে দিয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কারো কাছে মাথা নোয়াবার জন্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ আগেও রক্ত দিয়েছে, ভবিষ্যতেও রক্ত দিয়ে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করবে।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ২০০২ সালে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে গণসংহতি আন্দোলন। এরপর থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সম্পদ রক্ষার লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখে ২০১৫ সালের নভেম্বরে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বশীল দল হিসেবে গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক দল আকারে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য যে সংবিধান সংস্কার করতে হবে তার জন্য প্রথম ডাক দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দেশের জনগণের যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে লড়াকু ভূমিকা রেখে চলেছে এই দল।

আবুল হাসান রুবেল আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের বিষয়বস্তুতে গণভোটের পদ্ধতি অংশে যেভাবে ধারাগুলো লেখা হয়েছে সেগুলো স্পষ্ট নয়। আদেশের প্রতিটি ধারার বিষয়ে পরিষ্কার করে জনগণকে জানানো এবং নির্বাচনের আগেই টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে গণভোটের বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া বিষয়ে জনগণকে স্পষ্টভাবে অবহিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ঐক্যমতের প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়নি। এই ঐকমত্য ধরে রাখার জন্য সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যদি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ না হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, শ্রমিকরা কাজ পাবে না। আমাদেরকে নির্বাচনকে সফল করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

তাসলিমা আখতার আরও বলেন, গত ১৫ বছর যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সমস্ত নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদেরকে ভুলে গিয়ে আমরাই সব করেছি বলে কেউ সফল হতে পারবে না। সারা দেশের মানুষ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পাটাতন সৃষ্টি হয়েছে। এই সকল মানুষের নিপীড়ন-নির্যাতনের ইতিহাসকে অস্বীকার করে যারা গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস তৈরি করতে চান, তাদেরকে আমরা বলব মানুষকে একে অপরের মুখোমুখি করবেন না।

সমাবেশ ও মাথাল র‍্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন - জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু, মনির উদ্দীন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, দীপক কুমার রায়, তরিকুল সুজন, আলিফ দেওয়ান, ইখতিয়ার উদ্দিন বিপা, মনিরুল হুদা বাবন, অপরাজিতা চন্দ, গোলাম মোস্তফা, জাহিদ সুজন, সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন, পপি রানী সরকার, লুভানা তাবাসসুম, রোকনুজ্জামান মনি, মো. বিপ্লব খাঁন, বেনু আক্তার, মাহবুব রতন, আরিফুর রহমান মিরাজ, লুতফুন্নাহার সুমনা, জাহিদুল আলম আল জাহিদ, তাহসিন মাহমুদ ও আবু রায়হান খান সহ দলের দলের কেন্দ্রীয় ও সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাকর্মীবৃন্দ।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com