

রাজধানীর ৩০০ ফিটের মঞ্চে তারেক রহমানের দেয়া ভাষণে উঠে এসেছে জাতীয়তাবাদ, পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধন, ধর্মীয় সম্প্রীতি, দেশ গড়তে সবাইকে নিয়ে সাম্যের প্ল্যাটফর্ম তৈরির বার্তা। দেশের ইতিহাসকে না ভুলে আগামীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে ইচ্ছে, সেটিও প্রতিফলিত হয়েছে তার কথায়। মহান মুক্তিযুদ্ধ, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির নেপথ্যে প্রাণ হারানো সেই দেশপ্রেমিকদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক দীপ্তিময় ইচ্ছেশক্তিও জ্বলজ্বল করতে দেখা গেছে তার চোখে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তাকে বহনকারী বিমানটি সিলেটে অল্প সময় যাত্রাবিরতি দিয়ে রাজধানীর পথে ফের উড্ডয়ন করে। ঢাকায় বিমানটি অবতরণ করে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে। সেখানে তার জন্য আগে থেকেই আয়োজিত ছিল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
মূলত, সময়ের হিসাবে ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশের মাটিতে ওঠা সূর্যের আলোয় অবগাহন করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ঘরে ফেরা, জনসাধারণের উদ্দেশে দেশ গড়ার বার্তা, মা কে দেখতে হাসপাতালে যাওয়া— সবকিছুই ছিল আজ 'টক অব দ্য টাউন'।
বিমানবন্দর থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে তারেক রহমান বাইরে আসেন। রাস্তার পাশে সারি সারি গাঁদা ফুলে সজ্জিত ছোট্ট বাগান দেখে মন হয়তো আঁকুপাঁকু করছিল। পাদুকা খুলে পা রাখেন মাটিতে। কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটেন শিশিরভেজা ঘাসে। হাতে তুলে নেন এক মুঠো মাটি। তার চোখে মুখে তখন দেখা যাচ্ছিল আনন্দের ঝর্ণাধারা।
এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান। বলেন, নিরাপত্তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমার নিরাপত্তার জন্য। এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি।
তিনি রওনা দেন অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে। মঞ্চে বলেন, এখন সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। আমরা সবাই মিলে এমন একটা বাংলাদেশ গড়ব যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন একজন মা। আমরা দেশের শান্তি চাই।
মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত উক্তি ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ এর অনুকরণে দেশ ও জাতিকে নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানান তারেক। বলেন, দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সবার সামনে আমি বলতে চাই, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি (দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য আমার একটি পরিকল্পনা রয়েছে)। এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য।
তারেক রহমান বলেন, 'আপনারা দেখেছেন, গত ১৫ বছর মা, বোন, তরুণ প্রজন্ম কীভাবে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে। জুলাই যোদ্ধা, সময়ের সাহসী সন্তানকে হত্যা করেছে। ওসমান হাদিসহ যারা শহীদ হয়েছে যদি তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়তে পারি তাহলে দেশ গড়া সম্ভব। ধৈর্য ধরতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে এসে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।'
এদিন বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, 'প্রথমেই আমি রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাজারো লক্ষ-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি, অশেষ রহমতে প্রিয় মাতৃভূতিমেক ফিরে আসতে পেরেছি আপনাদের মাঝে।'
তারেক রহমান বলেন, '৭১ এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ২০২৪ সালে তেমন সর্বস্তরের মানুষ, সবাই মিলে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পেতে চায়।'
তিনি বলেন, 'এ দেশে পাহাড়ের, সমতলের, মুসলমান, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই আছে। আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, পুরুষ, শিশু যেই হোক না কেন নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে, যেন নিরাপদে ফিরতে পারে।'
শহীদ ওসমান হাদীকে নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'ওসমান হাদি চেয়েছিলেন এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক। ৭১ এ যারা শহীদ হয়েছে, ২৪ এ যারা শহীদ হয়েছে তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।'
তিনি বলেন, 'তরুণ প্রজন্মই আগামীতে দেশ গড়ে তুলবে। গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা দেশের শান্তি চাই।'
এরপর তার গাড়িবহর এগোতে থাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের দিকে। মা তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে রওনা দেন তিনি। তবে নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে তাকে বহনকারী গাড়ি হাসপাতালে পৌঁছতে দেরি হয়। পথে সড়কের দুই পাশে ছিল হাজারো নেতাকর্মী। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য সড়কে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছিলেন তারা। তারেক রহমানও নেতাকর্মীদের প্রতি হাত নেড়ে এই ভালোবাসার জবাব দেন।
সন্ধ্যা ৫টা ৫৩ মিনিটে তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান।