

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নিরাশ হয়ে কেউ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতেই পারে। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ সফল হতে দেবে না।
তিনি বলেন, আজ প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৬৬ ভাগ মানুষ মনে করছে বিএনপি আগামী নির্বাচনে সর্বাধিক আসন পাবে। জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন জানিয়েছে ২৬ শতাংশ। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দল শতকরা এক ভাগের চেয়ে কম সমর্থন পেয়েছে। এমন অবস্থায় কেউ নিরাশ হয়ে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতেই পারে। কিন্তু জনগণ মন স্থির করে ফেলেছে, তারা কোন ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেবে না।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান।
বিকেল ৪ টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
দেশ এবং দলের জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ফাস্টলেডি ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সবার শ্রদ্ধার পাত্র। সেই মানুষটা শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাস্তায় নেমে আসলেন, জেল খাটলেন নানা নিপীড়ন সহ্য করলেন এবং শেষ পর্যন্ত মানুষকে মুক্ত করলেন, পরিবর্তন ঘটালেন।’
তিনি বলেন, বড় দালান, এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন ট্রেন হলেও সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে জনসংখ্যার অনুপাতে কোটিপতি উৎপাদনের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ শীর্ষে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, কোটিপতি বাড়ছে, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে না। একপাশে কোটিপতি, অন্যপাশে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে। এটা গ্রহণযোগ্য উন্নয়ন নয়।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, একজন রাজনীতিবিদ একবার বলেছেন, দেশের মানুষ দরিদ্র আর বেকার, অথচ বড় বড় প্রকল্পগুলো যেন গোরস্থানে আলোক সজ্জা। দেখাতে সুন্দর লাগতে পারে, কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয় না।
দেশের মানুষকে শিক্ষিত করা, উপার্জন বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, নারীর অধিকার নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, কিভাবে তা করা হবে এবং কেমন উন্নয়নের স্বপ্ন বিএনপি দেখে তা জনগণকে জানানো হবে বলে জানান দলটির এই সিনিয়র নেতা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়িত হলে দেশ সত্যিকারের স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এতে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের উন্নয়ন, স্বাবলম্বিতা এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত হবে।
তিনি তরুণ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি জনগণের সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নেতা-কর্মীদের মর্যাদা বাড়বে। দেশের জন্য যে কাজ করবে তার মর্যাদা বাড়বে, এর জন্য এমপি বা মন্ত্রী হতে হবে না। দেশের জন্য কাজ করতে থাকুন, চাপের মুখেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুন। এভাবেই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু এটাকে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর দলকে আরও সুসংহত করেছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান। কারণ, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পরে যে পরিমাণ নেতা, দল ছেড়ে দিয়েছিলো কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার সময়ও যত নেতা দল ছেড়ে গিয়েছিলেন, এবার সেটা হয়নি। এর অর্থ হলো- দলের ঐক্য ধরে রাখছেন তারেক রহমান। এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আমাদেরকে আগামী দিনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিএনপিকে পুণরায় তার মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আগামীর লড়াইয়ে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ধারাবাহিক কর্মশালা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচি শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।