অলিম্পিক প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ: সংকট ও সম্ভাবনা

অলিম্পিক প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ: সংকট ও সম্ভাবনা
প্রকাশিত

অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এখানে প্রতিটি দেশই তার সেরা ক্রীড়াবিদকে পাঠায় আন্তর্জাতিক মানের মঞ্চে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রস্তুতি প্রতিযোগিতার সঙ্গে সমানগতি ধরে রাখতে পারছে কি? ইতিহাস, বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোকে দেখা যায়, দেশের অলিম্পিক প্রস্তুতি নানা সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিভার অভাব নয়, সুযোগের সংকট

বাংলাদেশে অলিম্পিকের জন্য যোগ্য ক্রীড়াবিদ কম নয়। আর্চারি, শুটিং, অ্যাথলেটিক্স, জিমন্যাস্টিকস বা অন্যান্য অলিম্পিক স্পোর্টসে তরুণ প্রতিভা রয়েছে। তবে সমস্যা হলো, এই প্রতিভাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি দেওয়ার জন্য যথাযথ অবকাঠামো নেই।

অধিকাংশ ক্রীড়াবিদ স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। পেশাদার কোচ, আন্তর্জাতিক মানের সরঞ্জাম, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতি, এসবের অভাব ক্রীড়াবিদের সক্ষমতা পুরোপুরি বিকশিত হতে দেয় না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা সীমিত থাকে, যা মানসিক ও কৌশলগত দিক থেকে বড় হস্তক্ষেপ।

অবকাঠামো ও অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ক্রীড়াব্যবস্থা মূলত ক্রিকেটকেন্দ্রিক। অলিম্পিক ধরণের খেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মানসম্মত স্টেডিয়াম বা ট্র্যাক নেই। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকগুলো প্রায়ই পুরাতন বা অসম্পূর্ণ, আর্চারি ও শুটিং রেঞ্জ সীমিত এবং জিমন্যাস্টিকস বা সুইমিং কেন্দ্রের সংখ্যা নগণ্য।

অর্থায়নও সীমিত। অলিম্পিকের প্রস্তুতির জন্য সরকারি বাজেট সীমিত এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতা প্রায়শই অসম্পূর্ণ। এই কারণেই অনেক প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ মাঝপথে তাদের ক্যারিয়ার ছেড়ে দেন বা অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে যান।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতার অভাব

ক্রীড়াবিদদের আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা সীমিত। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত বিদেশ সফর, প্রস্তুতি ম্যাচ বা আন্তর্জাতিক ক্যাম্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এই সুযোগ সীমিত হওয়ায় ক্রীড়াবিদরা মানসিক ও কৌশলগতভাবে আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতে পারছেন না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে অন্তত ৮-১০ বছরের ধারাবাহিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রস্তুতি বেশিরভাগ সময়ই ছোট মেয়াদি, যা ক্রীড়াবিদের সক্ষমতা পুরোপুরি প্রকাশ করতে বাধা দেয়।

নারী ক্রীড়াবিদদের চ্যালেঞ্জ

নারী ক্রীড়াবিদরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে। সামাজিক বাঁধা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাব এবং পরিবারিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রাথমিক পর্যায় থেকে অনুপ্রেরণা হারান। ফলে অলিম্পিকের জন্য যোগ্য নারী ক্রীড়াবিদ উৎপাদন খুব সীমিত।

সম্ভাবনার দিক

তবুও আশা আছে। আর্চারি ও শুটিংয়ে বাংলাদেশ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের ফলাফল দেখিয়েছে। অ্যাথলেটিক্সে কিছু নতুন প্রতিভা উদীয়মান। যদি সরকার, ক্রীড়া ফেডারেশন এবং বেসরকারি খাত সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেয়, দেশের অলিম্পিক প্রস্তুতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা সম্ভব।

প্রধান উদ্যোগগুলো হতে পারে:

  • মানসম্মত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কোচিং ব্যবস্থা তৈরি।

  • আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ম্যাচ এবং ক্যাম্পে নিয়মিত অংশগ্রহণ।

  • ক্রীড়াবিদদের আর্থিক ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

  • নারী ক্রীড়াবিদদের উৎসাহিত করা এবং সামাজিক বাধা দূর করা।

  • বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ, পুষ্টি ও মেডিক্যাল সাপোর্ট।

উপসংহার

বাংলাদেশে অলিম্পিক প্রস্তুতি এখনো চরম সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে চলছে। কিন্তু প্রতিভা ও সম্ভাবনা আছে। সঠিক নীতি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কাঠামোগত বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে শুধু অংশগ্রহণই নয়, সম্মানজনক অবস্থানও অর্জন করতে পারে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, নাহলে সম্ভাবনা হারিয়ে যাবে, এবং প্রতিভা কেবল ‘সম্ভাবনা’ হয়ে রয়ে যাবে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com