
সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডেতে পাত্তাই পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রেকর্ড ব্যবধানে জয়ে সিরিজের ট্রফি নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ। টানা ৪ সিরিজ হারের পর ওয়ানডেতে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল তারা।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৭৯ রানে জিতল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ২৯৬ রানের পুঁজি দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এর চেয়ে বড় জয় আছে আর একটি। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রানে জিতেছিল তারা।
মিরপুরে অবশ্য এটিই সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারায় তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের বড় জয়ের রেকর্ড ছিল ১৬০ রানের, ২০১২ সালে।
বাংলাদেশের বড় জয়ে ৩টি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন। সব মিলিয়ে সিরিজে তার শিকার ১২টি উইকেট। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের কোনো বোলার ১০ বা তার বেশি উইকেট নিলেন।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাওয়ার প্লের মধ্যে তাদের টপ-অর্ডার তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে দেন নাসুম আহমেদ। এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন তানভির ইসলাম। পঞ্চাশের আগে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারও চমৎকার বোলিং করেন রিশাদ। নাসুমের মতো তিনি নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া তানভির ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার ২টি করে উইকেট।
উইন্ডিজের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন দশ নম্বরে নামা আকিল হোসেন। এছাড়া আর কেউ ২০ রানও করতে পারেননি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ২৯৬ রান। হোম অব ক্রিকেটে ৭ বছরের মধ্যে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২০ রান করেছিল তারা।
অথচ একপর্যায়ে ২৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ১৭৬ রান। সেখান থেকে ইনিংসের বাকি অর্ধেকে আর কাঙ্খিত রান পায়নি স্বাগতিকরা। বাকি ২৫ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় মাত্র ১২০ রান।
পুরো ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মারেন মোট ১৪টি ছক্কা। সাইফের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬টি ছক্কা। এছাড়া সৌম্য সরকার ৪ ও নাজমুল হোসেন শান্ত মারেন ৩টি ছক্কা। শেষে নুরুল হাসান সোহানের ছক্কায় নিজেদের রেকর্ড স্পর্শ করে তারা।
২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ১৪টি ছক্কা মেরেছিল বাংলাদেশ। সেদিন তামিম ইকবাল ৬টি ও লিটন কুমার দাস মেরেছিলেন ৮টি ছক্কা।
দলের তিনশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহের কারিগর দুই ওপেনার সৌম্য ও সাইফ। দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়ে ১৭৬ রান যোগ করেন তারা দুজন। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৯২ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ও লিটন।
তবে আশা জাগিয়েও সেঞ্চুরি করতে পারেননি সাইফ ও সৌম্য। ৬টি করে চার-ছক্কায় ৮০ রান করে ক্যাচ আউট হন সাইফ। আর সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৯১ রান।
ওপেনারদের বিদায়ের পর আর বাড়েনি রানের গতি। উল্টো পেছন পানে হাঁটা ধরে বাংলাদেশ। দুইবার জীবন পেয়েও ৫৫ বলে ৪৪ রানের বেশি করতে পারেননি শান্ত। তিন নম্বরে নামা হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ বলে ২৮ রান।
আগের দুই ম্যাচে ঝড় তোলা রিশাদ হোসেনকে নামানো হয় ছয় নম্বরে। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। আকিল হোসেনের করা ৪৬তম ওভারে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রিশাদ ও নাসুম আহমেদের উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পরে অষ্টম উইকেটে ২৪ বলে ৩৫ রান যোগ করেন নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৭ বলে ১৭ রান করেন মিরাজ আর সোহানের ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ১৬ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন আকিল হোসেন। তাদের ফিল্ডাররা ছেড়ে দেয় ৬টি ক্যাচ। এর মাশুল দিয়ে বড় পরাজয়ের সিরিজটিও হেরে যায় তারা।
চট্টগ্রামে আগামী সোমবার শুরু হবে দুই দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৬/৮ (সাইফ ৮০, সৌম্য ৯১, হৃদয় ২৮, শান্ত ৪৪, অঙ্কন ৬, রিশাদ ৩, নাসুম ১, সোহান ১৬*, মিরাজ ১৭; আকিল ১০-১-৪১-৪, চেজ ৮-১-৫৩-১, পিয়েরে ১০-০-৪৬-০, গ্রিভস ৭-০-৬১-০, মোতি ৮-০-৫৩-১, আথানেজ ৭-০-৩৭-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩০.১ ওভারে ১১৭ (আথানেজ ১৫, কিং ১৮, অগাস্ত ০, কার্টি ১৫, হোপ ৪, রাদারফোর্ড ১২, চেজ ০, গ্রিভস ১৫, মোতি ৭, আকিল ২৭, পিয়েরে ০*; নাসুম ৬-১-১১-৩, মিরাজ ৭-০-৩৫-১, তানভির ৮-০-১৬-২, রিশাদ ৯-০-৫৪-৩)
ফল: বাংলাদেশ ১৭৯ রানে জয়ী