শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে সুপার ওভারে হারল বাংলাদেশ

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে সুপার ওভারে হারল বাংলাদেশ
প্রকাশিত

মূল ম্যাচের শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৫ রান। বোলিংয়ে সাইফ হাসান। প্রথম দুই বলে রান নিতে ব্যর্থ আকিল হোসেন। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি স্ট্রাইক দিলেন সেট ব্যাটার শাই হোপকে। তবে হোপও ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না।

সমীকরণ দাঁড়াল ২ বলে ৩ রান। বড় শট মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন আকিল। শেষ বলে উড়িয়ে মারলেন শেষ ব্যাটার খ্যারি পিয়েরে। স্কয়ার লেগের দিকে গিয়ে ক্যাচ নিতে পারলেন না নুরুল হাসান সোহান। এরই মধ্যে ২ রান নিয়ে নিলেন হোপ ও পিয়েরে।

ফলে টাই হয়ে যায় ম্যাচ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এই প্রথম টাই হয় বাংলাদেশের কোনো ম্যাচ।

সুপার ওভারে বোলিংয়ের দায়িত্ব নেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন শাই হোপ। পরের বলে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন শেরফান রাদারফোর্ডকে। ক্রিজে আসেন ব্র্যান্ডন কিং। পরের তিন বলে ৫ রান নিয়ে নেন হোপ ও কিং।

শেষ বলে মোস্তাফিজের কাটার হোপের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে। ফলে ১০ রানের সংগ্রহ পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সফরকারীদের হয়ে বোলিংয়ে আসেন আকিল হোসেন। ব্যাটিংয়ে নামেন সাইফ ও সৌম্য সরকার। প্রথম বলই আকিল করেন ওয়াইড। পরেরটি 'নো' বল করেন তিনি। সৌম্য নিয়ে নেন ২ রান। পরে ফ্রি হিটে আসে ১ রান। স্ট্রাইক পান সাইফ। 

সাইফ প্রথম বল খেলেন ডট। পরের বলে ১ রান নিয়ে সৌম্যকে ব্যাটিং দেন তিনি। ৩ বলে ৫ রানের সমীকরণে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ আউট হন সৌম্য। পরে ব্যাটিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। লেগ বাই থেকে ১ রান নেন তিনি।

শেষ বলে বাকি থাকে ৪ রান। ওয়াইড করে বসেন আকিল। পরের বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি সাইফ। তাই সুপার ওভারে ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

মূল ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২১৩ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসও থামে ৯ উইকেটে ২১৩ রানে। 

সুপার ওভার রোমাঞ্চের আগে ম্যাচটি ছিল পুরোপুরি স্পিন রাজত্বের। প্রথম ইনিংসে পুরো ৫০ ওভার স্পিনার দিয়ে বোলিং করিয়ে অনন্য ইতিহাস গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

এর আগে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৪ ওভার স্পিনার দিয়ে করানোর রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার, ৩টি আলাদা ম্যাচে।

পরের ইনিংসে বাংলাদেশেরও বেশিরভাগ বোলিং করেন স্পিনাররাই। সব মিলিয়ে পুরো ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররা করেন ৯২ ওভার। এটিও বিশ্ব রেকর্ড। ভারতের দেরাদুনে ২০১৯ সালে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররা মিলে করেছিলেন ৪৭০ বল বা ৭৮.২ ওভার।

ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সাইফ হাসানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দীর্ঘ ভ্রমণ করে আগের মাঝ রাতে ঢাকায় পৌছেই দুপুরে খেলতে নেমে যাওয়া আকিল হোসেনের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের ওপেনার।

স্পিন স্বর্গে এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরা। 

একপ্রান্ত আগলে রেখে এগোচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। দলের একশ পূর্ণ হওয়ার পর তিনিও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। ৩ চার ও ১ ছক্কায় মাত্র ৫০.৫৬ স্ট্রাইক রেটে ৮৯ বলে ৪৫ রান করেন সৌম্য। ক্যারিয়ারে অন্তত ২০ বল খেলা ইনিংসে এটিই তার সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট।

নুরুল হাসান সোহান ও রিশাদ হোসেনের আগে নামানো হয় নাসুম আহমেদকে। তাকে নিয়ে ২৫ রানের জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর সোহানের সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে ৩৫ রান। ২৪ বলে ২৩ রান করে ফেরেন সোহান।

৪৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৬৩ রান। মনে হচ্ছিল দুইশও করতে পারবে না তারা। তবে ভিন্ন ভাবনাই ছিল রিশাদের। স্রোতের বিপরীতে ঝড় তোলেন তরুণ অলরাউন্ডার। ৩টি করে চার-ছক্কায় ২৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে ১৪ বলে ৩৯ রান করেন তিনি।

বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ১০ বলের ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের রেকর্ড। রিশাদের ঝড়ে ২১৩ রান করে বাংলাদেশ। সাত ম্যাচ পর পুরো ৫০ ওভার খেলার কৃতিত্বও দেখায় তারা। 

অষ্টম উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ২৪ বলে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫০ রানের জুটি গড়েন রিশাদ। ৫৮ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ৩ উইকেট নিতে ১০ ওভারে ৬৫ রান দেন গুদাকেশ মোতি। এছাড়া আকিল হোসেন ও আলিক আথানেজ নেন ২টি করে উইকেট। ১০ ওভারে ৩ মেডেনসহ মাত্র ১৪ রান খরচ করেন আথানেজ।

পরে রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই ব্র্যান্ডন কিংয়ের উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়ে শুরুর চাপ সামাল দেন আলিক আথানেজ ও কেসি কার্টি। তবে দুজনের কেউই সম্ভাবনাময় ইনিংস বড় করতে পারেননি।

আথানেজ ২৮ ও কার্টি ৩৫ রান করে ফেরেন। এরপর রিশাদ, তানভির ইসলাম, নাসুমদের ঘূর্ণির সামনে আকিম অগাস্ত, শেরফান রাদারফোর্ড, মোতি, রস্টোন চেজরাও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। 

একপ্রান্তে আগলে রেখে কিছুক্ষণ চেষ্টা করেন শাই হোপ। তাকে বেশ ভালো সঙ্গ দেন জাস্টিন গ্রিভস। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৪৪ রানের জুটি। ৪৫তম ওভারে কভার থেকে সরাসরি থ্রোয়ে ২৬ রান করা গ্রিভসকে রান আউট করেন মিরাজ। 

এরপর আকিল হোসেনকে নিয়ে শেষের চেষ্টা করেন হোপ। নবম উইকেট জুটিতে আসে ৩৪ রান। পরে শেষ ওভারে সাইফের সেই জাদু। ৫ রানের সমীকরণে মাত্র ৪ রান দিয়ে ম্যাচ সুপার ওভারে নেন সাইফ। ৬৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন হোপ। 

বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন রিশাদ। এছাড়া নাসুম ও তানভির নেন ২টি করে উইকেট।

একই মাঠে বৃহস্পতিবার সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২১৩/৭ (সাইফ ৬, সৌম‍্য ৪৫, হৃদয় ১২, শান্ত ১৫, মাহিদুল ১৭, মিরাজ ৩২, নাসুম ১৪, সোহান ২৩, রিশাদ ৩৯; আকিল ১০-১-৪১-২, চেজ ১০-২-৪৪-০, পিয়েরে ১০-০-৪৩-০, মোতি ১০-০-৬৫-৩, আথানেজ ১০-৩-১৪-২)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২১৩/৯ (আথানেজ ২৮, কিং ০, কার্টি ৩৫, অগাস্ত ১৭, হোপ ৫৩*, রাদারফোর্ড ৭, মোতি ১৫, চেজ ৫, গ্রিভস ২৬, আকিল ১৬, পিয়েরে ২*; নাসুম ১০-০-৩৮-২, মিরাজ ১০-১-৩৮-০, মোস্তাফিজ ৮-০-৪০-০, তানভির ১০-০-৪২-২, রিশাদ ১০-০-৪২-৩, সাইফ ২-০-৯-১)

ফল: ম্যাচ টাই (সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ রানে জয়ী)

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com