এআইয়ের অবাধ ব্যবহার, বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ সতর্কবার্তা

এআইয়ের অবাধ ব্যবহার, বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ সতর্কবার্তা
প্রকাশিত

জেনারেটিভ এআই দিয়ে তৈরি ভুল আর অর্ধসত্য তথ্যে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কখনো ভিডিও, কখনো লেখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে অপতথ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না দিতে পারলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেলেই দেখা যায়, নানা ভিডিও। কখনও নদীতে উল্টে পড়ছে বসতভিটা, কিংবা ভিডিও দেখে প্রথমে বিশ্বাস করার মতো কোনো দুর্ঘটনার চিত্র। অথচ এমন কিছুই ঘটেনি। জেনারেটিভ এআইয়ের কারসাজিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেনো হয়ে উঠেছে বিভ্রান্তির খনি।

সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির কথাই বলা যাক। এআইয়ের মাধ্যমে মুহূর্তেই মৃতকে করা হচ্ছে জীবিত। ইচ্ছা মতো কথা, তার মুখেই শুনিয়ে দেয়া হচ্ছে দর্শকদের। এমনকি এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে একদম আসল ছবির মতো নকল ছবি।

অনেকেই মনে করেন এসব এআই ভিডিও কেউ বিশ্বাস করে না। তাই ভিডিওগুলোর নিচে মন্তব্যের ঘরে নজর দিলেই চক্ষু চড়কগাছ। নির্মাতার টাইটেল আর প্রযুক্তি দক্ষতায় এসব ভিডিওকে একদম সত্যি ভেবে নেয়ার কারণে সমাজে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে সংক্রামকের মতো।

গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. আফতাব হোসেন বলছেন, অপতথ্য সঠিক তথ্যের তুলনায় ছড়িয়ে পড়ে ছয়গুণ গতিতে। আর এআই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যেরও থাকে না কোনো নিরাপত্তা।

তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র পাবলিক হয়ে গেলে সেটা আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের ব্যাপার। এটা আসলে আমাদের নলেজে থাকতে হবে যে আমরা এআইকে কতটুকু তথ্য দেব, কতটুকু দেব না। এআইয়ের নৈতিক পলিসি কী? কীভাবে কাজ করে? আমি কতটুকু করবো? সেগুলো জানতে পারলে কনফিউশন অনেকখানি দূর হয়ে যায়।

এদিকে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে শুরু হয়েছে এআইয়ের ব্যবহার। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এআইয়ের অবাধ ব্যবহারে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। নির্বাচন কেন্দ্রিক তথ্য বিভ্রাট তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ নিতে পারে স্বার্থান্বেষী মহল।

অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বার্থান্বেষী মহল বা সুবিধাবাদী গোষ্ঠি নানাভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তনের কাজগুলো করে। এভাবে ওই গোষ্ঠিগুলো তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করার চেষ্টা করে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হলো, প্রযুক্তিগত কৌশলগুলো ব্যবহার করে ওই গোষ্ঠিগুলোকে শনাক্ত করে আইনের মুখোমুখি করা। সেটিকে দৃষ্টান্ত আকারে উপস্থাপন করতে পারলে পরিত্রাণ মিলবে।’

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নীতিমালা তৈরি ও প্রয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে এখনই। এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাজান জোহা বলেন, আপনি যে কোনো ধরনের তথ্য যদি শেয়ার করেন, ওই তথ্য ভবিষ্যতে সে কী করবে-- সেটার নিয়ন্ত্রণ কোনো অবস্থাতেই অন্তত আমাদের দেশে নেই। আমাদের যে কোনো সিদ্ধান্তকেও তারা ক্লোন করতে পারছে বা তারা ইনফ্লুয়েন্স করতে পারছে। এটা এরইমধ্যে প্রমাণিত। সাইবার নিরাপত্তা আইনে এআইয়ের রেগুলেশনটা এরইমধ্যে খসড়া পর্যায়ে আছে। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় এআই উপেক্ষার উপায় নেই জানিয়ে অপব্যবহার রোধে যৌক্তিক গবেষণার এখনই সময়, পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com