

মহাকাশ গবেষণায় নতুন চমক! মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির নিকটতম প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডার চারপাশে ৩৬টি নতুন বামন ছায়াপথের (ডোয়ার্ফ গ্যালাক্সি) সন্ধান পেয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই ছায়াপথগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি অভাবনীয়ভাবে একই দিকে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছে, যা মহাবিশ্বের প্রচলিত গ্যালাকটিক গতিশীলতার ধারণার সঙ্গে মিলছে না। সাধারণত, গ্যালাক্সির অবস্থান হয় এলোমেলো এবং বিশৃঙ্খল। কিন্তু একই সারিতে এতগুলো বামন ছায়াপথের অবস্থান বিজ্ঞানীদের জন্য এক অপ্রত্যাশিত চমক হয়ে এসেছে।
নতুন এই আবিষ্কারের অন্যতম গবেষক বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ওয়েইজ বলেন, “এটি এক অবিশ্বাস্য ও রহস্যময় ঘটনা। ছায়াপথগুলো কেন একই সারিতে রয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এটি মহাজাগতিক বিবর্তনের প্রচলিত ধারণার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।”
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই বামন ছায়াপথগুলো মহাবিশ্বের কোনো অজানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা, বড় ধরনের মহাজাগতিক সংঘর্ষ বা অতীতের কিছু বিশাল আকৃতির গ্যালাক্সির সংমিশ্রণের ফলে এই ছায়াপথগুলোর গঠন ভিন্নভাবে প্রভাবিত হতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে, ছায়াপথগুলো ২০০ থেকে ৫০০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছে এবং এদের তারামণ্ডল গঠনের ধারা প্রচলিত ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো সাভিনো বলেন, “বামন ছায়াপথগুলোতে তারার গঠন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক দেরিতে ঘটছে। এটি প্রচলিত মহাজাগতিক মডেলগুলোর বিরোধিতা করছে এবং আমাদের মিল্কিওয়েতে ছায়াপথ গঠনের প্রচলিত অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করছে।”
বিজ্ঞানীদের মতে, এই আবিষ্কার মহাবিশ্বের বিবর্তন ও অতীতের মহাজাগতিক ঘটনার প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এই ছায়াপথগুলো প্রায় ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এসব ছায়াপথে তারাগুলো আশানুরূপ গতিতে তৈরি হচ্ছে না, যা মহাবিশ্বের প্রচলিত নিয়মের বিপরীতে যাচ্ছে।
এই নতুন পর্যবেক্ষণ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে—অ্যান্ড্রোমিডার আশপাশের ছায়াপথগুলো কেন এত ব্যতিক্রমী আচরণ করছে? আর এই ছায়াপথগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে ও মহাবিশ্বের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন কী তথ্য দিতে পারে?
এই আবিষ্কার মহাজাগতিক রহস্য উন্মোচনের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।