

টেলিপোর্টেশন প্রযুক্তি, যা কোনও বস্তুকে বা মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে, এখনো বাস্তবে আবিষ্কার হয়নি। তবে সিনেমা এবং কল্পবিজ্ঞানের বইগুলোতে এ ধরনের দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়, যেখানে বিশেষ কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছেন, এবং এবার যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা টেলিপোর্টেশন প্রযুক্তিতে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছেন। তবে, তারা মানুষ না হলেও তথ্য টেলিপোর্ট করতে সক্ষম হয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে ডেটা বিমিংয়ের মাধ্যমে তারা এই অগ্রগতি অর্জন করেছেন। তাদের পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ৬ ফুট দূরত্বে দুটি কোয়ান্টাম প্রসেসরের মধ্যে লজিক গেট কম্পিউটার অ্যালগরিদমের মৌলিক উপাদান ব্যবহার করে টেলিপোর্টেশন পরীক্ষা সফল হয়েছে। পরীক্ষার অংশ হিসেবে আলোর কণা (ফোটন) ব্যবহার করে দুটি আলাদা যন্ত্রের মধ্যে কোয়ান্টাম লিংক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যা তথ্য স্থানান্তরকে আরও উন্নত করেছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটি প্রসেসর একই অ্যালগরিদম ভাগ করে দূর থেকে একে অপরের কম্পিউটিং কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের স্কেলেবিলিটি বা পরিমাপ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দুনিয়ায় স্কেলেবিলিটি সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয়। যখন কাজ বা তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তখন গুণগত পরিবর্তন দেখা দেয়।
এটি শুধু কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নয়, বরং ক্রিপ্টোগ্রাফি, অপটিমাইজেশন, এবং বড় ডেটা সেট অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে। নতুন এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ছোট যন্ত্রের মধ্যে তথ্য স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি করেছেন, যা ভবিষ্যতে লাখ লাখ কিউবিট তথ্য প্রক্রিয়া করতে সক্ষম করবে।
এছাড়া, ২০২৩ সালে বিজ্ঞানীরা আলো ব্যবহার করে একটি ছবি টেলিপোর্ট করতে সক্ষম হলেও অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা এবারই প্রথম দীর্ঘ দূরত্বে টেলিপোর্টেশন প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ডুগাল মেইন বলেন, "আমাদের গবেষণায় দূরবর্তী সিস্টেমের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করতে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন ব্যবহার করেছি। নতুন এই অগ্রগতি কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।"
এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং টেলিপোর্টেশন প্রযুক্তির ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে আরও উন্মোচিত করেছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল